হজরত ইমাম মাহদি (আ.) কবে আসবেন ??







মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার শতাব্দী সর্বোৎকৃষ্ট, তারপর উহার সন্নিহিতরা, তারপর উহার সন্নিহিতরা, অতঃপর মিথ্যার প্রাদুর্ভাব হবে’ (নেসাই ও মিশকাত)। মহানবীর (সা.) সোনালি যুগ ৩০০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে এক হাজার বছর পর ইমাম মাহদির আবির্ভাব হওয়ার কথা।

অন্য একটি হাদিসে ইমাম মাহদির আগমনের নিদর্শনগুলো প্রকাশের কথা আরও কিছু আগে শুরু হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। যেমন হজরত আবু কাতাদা (রা.) বর্ণনা করেছেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সেই লণগুলো ২০০ বছর পর দেখা দেবে, যা হাজার বছর পর আসবে’ (মেশকাত)।

এই হাদিসের সমর্থনে আল্লামা হজরত মোল্লা আলী কারি (রহ.) মিশকাত শরিফের শরাহ মিরকাহ নামক গ্রন্থে লিখেছেন ‘সেই ২০০ বছর পর, যা হাজার বছর পর আসবে, তখনই ইমাম মাহদির (আ.) জাহির হওয়ার সময়’ (মিরকাহ, শরহে মেশকাত)।

মহানবীর (সা.) হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইসলামের প্রথম ৩০০ বছর ইসলাম প্রতিষ্ঠার শ্রেষ্ঠতম যুগ। অতঃপর যদিও ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে মুজাদ্দিদ বা ধর্ম সংস্কারক আবির্ভূত হতে থাকবেন তার পরও পরবর্তী এক হাজার বছরে শরিয়ত আল্লাহর দিকে উঠে যাবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মহানবীর (সা.) ৩০০ বছরের পর চতুর্থ শতাব্দী থেকে ক্রমাবনতির ধারায় ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত ইসলাম আল্লাহর দিকে উঠে যাবে আর পৃথিবীতে ইসলাম শুধু নামেমাত্র থাকবে, ইসলামের চরম অধঃপতন ঘটবে। ইসলামের এই অধঃপতন থেকে উদ্ধার করার জন্য আল্লাহতাআলা ইমাম মাহদিকে হিজরি চতুর্দশ শতাব্দীর শুরুতেই পাঠাবেন।


বিষয়টি স্পষ্ট, হজরত ইমাম মাহদির আগমন হওয়ার কথা ১২০০ হিজরি সনের পর। কিন্তু ১২০০ হিজরি পার হয়ে বর্তমান ১৫০০ হিজরি শতাব্দী চলছে। ইমাম মাহদির আগমন যদি এখনো না হয়ে থাকে, তাহলে তার আসার সময় কখন? এবার দেখা যাক তার আবির্ভাব সম্পর্কে বিশিষ্ট বুজুর্গ ও আলেম সাহেবানরা কী মত পেশ করেছেন। আলহাজ মাওলানা একেএম ফজলুর রহমান মুন্সি রচিত ‘পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে হজরত ইমাম মাহদি (রঃ)’; যা ১৯৮৪ সালে দ্য তাজ পাবলিশিং হাউস, ৭/বি, প্যারিদাস রোড, ঢাকা-১ কর্তৃক প্রকাশিত হয়। এর একাংশে ইমাম মাহদির আবির্ভাবের সময় সম্পর্কে উল্লেখ করেন ‘এই উপমহাদেশের বিখ্যাত অলী হজরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ কাশ্মিরী (রঃ) তাহার ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লেখ করেছেন, ১৩৮০ হিজরী সালে ইমাম মাহদি জন্মগ্রহণ করিবেন এবং চল্লিশ বৎসর বয়সে আত্মপ্রকাশ করিবেন।


এই হিসাব অনুসারে ইমাম মাহদি ১৪২০ হিজরী সালে আত্মপ্রকাশ করিবেন। সুতরাং তাহার প্রকাশ পাওয়ার মাত্র বিশ বৎসর বাকী রহিয়াছে’ (পৃষ্ঠা. ১৬-১৭)। এ অনুযায়ী ইমাম মাহদির আবির্ভাব হওয়ার কথা ২০০৪ সালে। কারণ ১৯৮৪ সালে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন আর মাত্র ২০ বছর বাকি আছে ইমাম মাহদির আগমনের সময়। তাহলে বর্তমান কত সাল চলছে?


মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস থেকে প্রকাশিত (হিজরি ১৩০৫) হজরত আল্লামা আব্দুল ওহাব শা’রানী প্রণীত কিতাব ‘আল ইওয়াকিত ওয়াল জাওয়াহির’ গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের ১৬০ পৃষ্ঠায় তিনি এ মত প্রকাশ করেছেন, মাহদি (আ.) ১২৫৫ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করবেন। দ্বাদশ হিজরির মুজাদ্দিদ হজরত শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রহ.) তার মূল্যবান কিতাব ‘তাফহিমাতে ইলাহিয়াত’ প্রকাশকাল ১৩৫৫ হিজরি। ওই গ্রন্থের ১৪৩ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, ‘মহাপ্রতাপশালী আমার প্রভু আমাকে জানিয়েছেন যে, কেয়ামত অতি নিকটবর্তী এবং হজরত মাহদি (আ.) প্রকাশ হওয়ার জন্য প্রস্তুত।’



মৌলভি নবাব সিদ্দীক হাসান খান ভূপালী সাহেবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘হেজাজুল কেরামাহ ফি আসারে কাদীমা’ গ্রন্থে তিনি ইমাম মাহদির আবির্ভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং বহু গণ্যমান্য আলেমের উদ্ধৃতি দিয়ে নিজ মন্তব্য এভাবে বর্ণনা করেছেনÑ ‘আমি বড় মজবুত সূত্রগুলো মিলিয়ে দেখছি যে, নিশ্চয় তিনি (ইমাম মাহদি) হিজরি চতুর্দশ শতাব্দীর প্রারম্ভে আবির্ভূত হবেন’ (পৃষ্ঠা-৩৯৫)।

পাক ভারতের খ্যাতনামা আলেম সৈয়দ আব্দুল হাই (রহ.) তার লিখিত পুস্তক ‘হাদিসুল গাসীয়া’ গ্রন্থে লিখেছেন ‘চতুর্দশ শতাব্দীর প্রারম্ভে হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাব অনেকটা সুনিশ্চিত। যেহেতু মাহদি (আ.) সম্পর্কিত সকল নিদর্শনাবলী প্রকাশ হয়ে গেছে।’

খাজা হাসান নিযামী পাক-ভারতের বিখ্যাত সুফি ও সাহিত্যিক এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক তিনি ইমাম মাহদির আগমন সম্পর্কে ‘কিতাবুল আমর ইয়ানী মাহদির আনসার ও ফরায়েয’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন। ওই গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেন ‘মাহদি (আ.)-এর যুগ হিজরী চতুর্দশ শতাব্দী।’ তাছাড়া তিনি একবার আরব দেশ ভ্রমণ করে লিখেছেনÑ ‘আরবের মশায়েখ ও উলামায়ে কেরাম সবাই হজরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর অপো করছেন। এমন কি শেখ সানসীর এক খলীফা এতদূর বলে ফেললেন যে, হিজরী ১৩৩০-এ মাহদি (আ.) যাহির হয়ে পড়বেন’ (পত্রিকা ‘আহলে হাদিস’, ২৬ জানুয়ারি, ১৯১২ ইং)।


উল্লিখিত বিশিষ্ট আলেমরা ইমাম মাহদির (আ.) আবির্ভাব সম্পর্কে তাদের পুস্তকে যা উল্লেখ করেছেন, সে অনুযায়ী ইমাম মাহদি অনেক বছর আগেই অবির্ভূত হওয়ার কথা ছিল, তাহলে এখন তিনি কোথায়? অন্যদিকে তাকে মানার গুরুত্বও অনেক, যেভাবে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে  মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা তাকে দেখতে পাও তার হাতে বয়াত করবে, যদি বরফের পাহাড় হামাগুড়ি দিয়েও যেতে হয়, নিশ্চয় তিনি তোমাদের খলিফা আল-মাহদি’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, বাব খুরুজুল মাহদি)। অন্য এক হাদিসে তিনি (সা.) বলেছেন, ‘অতঃপর আল্লাহতাআলার খলিফা ইমাম মাহদি আসবেন, তোমরা তার আগমনবার্তা শোনামাত্রই তার কাছে হাজির হয়ে বয়াত করবে’ (মিসবাহ, হাসিয়া ইবনে মাজাহ)।

কোরআন-হাদিস থেকে যা জানা যায়, ইমাম মাহদির (আ.) আগমন হবে আবার সব ধর্মের ওপর ইসলামকে জয়যুক্ত করার উদ্দেশ্যে। তিনি মহানবীর (সা.) আদর্শ এবং পবিত্র কোরআনের শিক্ষা বিশ্বমানবের কাছে আবার প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি নতুন কোনো শরিয়ত নিয়ে আসবেন না, কারণ ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম এবং মহানবী (সা.) শেষ শরিয়তদাতা নবী, তার পর আর কেই নতুন শরিয়ত নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করবেন না। ইমাম মাহদি (আ.) এসে মহানবীর (সা.) কাজই পরিচালনা করবেন।

 ধর্মে যেসব বেদাত সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করবেন। তিনি ইসলামের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনবেন। তাই ইমাম মাহদিকে (আ.) সাহায্য করা ও তার আহ্বানে সাড়া দেওয়াকে প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য বলে মহানবী (সা.) ঘোষণা করেছেন। যেমন তিনি (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের ওপর সর্বতোভাবে ওয়াজিব হবে ইমাম মাহদির সাহায্য করা অথবা তার ডাকে সাড়া দেওয়া’ (সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল মাহদি)।

 তাই আমাদের কর্তব্য হবে ধর্ম সংস্কারের জন্য শেষ জামানায় যার আসার কথা তিনি এসেছেন কিনা তা অন্বেষণ করা। আল্লাহতাআলা আমাদের সবাইকে প্রকৃত ইসলামের ছায়ায় জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।


ইমাম মাহদির আগমন এবং তার প্রেখাপট সংশ্লিষ্ট কিছু ইতি কথা

ইমাম মাহাদির আগমনের কথা আমরা  আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভিবিন্ন হাদিছ বিশ্লেষণ করে জানতে পারি যা তিনি অনেক বার সাহাবীদের কাছে বর্ণনা করেছেন  ইমাম মাহাদির আগমনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার দুনিয়াতে আসার পূর্বের ও ওই সময়কার ভিবিন্ন প্রেক্ষাপট আমাদের সামনে বর্ণনা করেন যা আজ এখানে আলোচনা করা হবে 

--- প্রেখাপট ----      
ইসলাম অপরিচিত/পর হয়ে যাবে: 
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“ইসলাম অপরিচিত অবস্থা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল। অদূর ভবিষ্যতে সে সূচনাকালের মতোই অপরিচিত অবস্থায় ফিরে যাবে। সে দুটি মসজিদের মাঝে গুটিয়ে যাবে, যেমনটি সাপ তার গর্তে গিয়ে গুটিয়ে যায়”। (সহিহ মুসলিম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৩১)

হাদিসে উল্লেখিত ‘গারীব’ শব্দটির অর্থ অচেনা, অজানা, অপরিচিত, পর। শুরুর যুগে ইসলাম মানুষের কাছে অপরিচিত ধর্ম ছিল। মানুষ বলত, এ আবার কোন ধর্ম, যার কথা জীবনে কোনদিন শুনিনি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে একসময় ইসলাম ঐ সূচনাকালের মতোই অচেনা হয়ে যাবে এবং সাপ যেমন গর্তে গিয়ে গুটিয়ে যায়, ইসলামও তেমন দুই মসজিদের মধ্যখানে গুটিয়ে যাবে।


সেই যুগটি এসে পড়েছে। আমাদের এই যুগের অধিকাংশ মুসলমানের কাছে ইসলাম একটি অচেনা ও অপরিচিত ধর্মমত। মুসলমান ইসলাম জানে না, ইসলাম বোঝে না। ইসলামের পরিচয় কি? আপনি কি করে মুসলমান হলেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ বেশিরভাগ মুসলমান। অধিকাংশ মুসলমান ইসলামের বিধিবিধান সম্পর্কে অনবিহিত। ইসলাম যে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, ইসলামে যে সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতিও আছে, এসব কল্পনায়ও নেই অধিকাংশ মুসলমানের। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগগুলোর সঙ্গে তাদের আচরণ এমন যে, তারা জানেই না, এসব বিধিবিধানের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক আছে, যেমন আছে নামাজ রোজার সঙ্গে। কাজেই নির্দ্বিধায় বলা যায়, দেড়শো+  কোটি মানুষের ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম আজ একটি অপরিচিত জীবনবিধান, যেমনটি অপরিচিত ছিল সূচনালগ্নে।

ইমাম মেহেদি (আঃ) এর আগমন পূর্ব এই আলামতটি এখন অত্যন্ত পরিষ্কার।

খুন খারাবীর বন্যা বইবে :                                                                                                                                                                      
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কসম খেয়ে বলেছেনঃ

“ততক্ষন পর্যন্ত কিয়ামত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এমন দিনের মুখোমুখি না হবে যে, হত্যাকারী নিজেও জানবে না সে কেন হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানবে না তাকে কেন হত্যা করা হল”।

জনৈক ব্যক্তি আরয করল, ‘এমনটি কেন হবে?’

ইরশাদ করলেন, “ফেতনার কারনে হত্যা,খুন ব্যাপকতা লাভ করবে”। অতঃপর বলেন, “হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামে যাবে”। (মুসলিম শরীফ)

হত্যাকারী জাহান্নামী হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ, সে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। কিন্তু নিহত ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে কেন সে কথা বিধৃত হয়েছে অন্য একটি হাদিসে। আর তা হল,

“নিহত ব্যক্তিও তো হত্যা করার চেষ্টায় ছিল। (কিন্তু সে পারেনি) তাই সেও জাহান্নামী”। (বুখারি শরীফ)

ফেতনার ভয়ঙ্কর রূপ এখন সর্বত্রব্যাপী। হত্যা ও জঘন্যতাও সর্বত্রব্যাপী। জাতীয় বিরোধ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দলাদলির কারণে অগণিত মানুষ খুন হচ্ছে নিয়মিত। অজ্ঞাতনামা লাশের কারণে এমন কি কে হত্যাকারী আর কে নিহত তাও অনেক সময় জানা যায় না।  একজন লোক খুন হবার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে আমার দলের নয়। ইমাম মেহেদি (আঃ) এর আগমন পূর্ব এই আলামতটি এখন অত্যন্ত পরিষ্কার।.
                                                                                                                                                       
মুসলমানগণ মালদার হবে তবে দ্বীনদার হবে না :                                                                                     হযরত আলী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। হটাৎ করেই উদিত হলেন মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ)। তাঁর গায়ে তখন চামড়ার তালিযুক্ত একটি চাদর শোভা পাচ্ছিল। তার এই হতদরিদ্র অবস্থা দেখে এবং তাঁর ইসলামপূর্ব সময়ের কথা স্মরণ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদতে শুরু করলেন। কারণ, ইতিপূর্বে হযরত মুসআব (রাঃ) আলালের ঘরের দুলাল হবার সুবাদে সর্বদাই মখমলের কোমল মূল্যবান পোশাক পরিধান করতেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ
“হে মুসলমানগণ! সেদিন তোমাদের কি অবস্থা হবে যখন সকালে তোমরা এক পোশাক পরিধান করবে আর বিকালে পরিধান করবে অন্য পোশাক। খাদ্যের এক পাত্র সরাতে না সরাতেই দ্বিতীয় পাত্র উপস্থিত করা হবে। তোমরা তোমাদের ঘরে এমনভাবে পর্দা ঝুলাবে যেভাবে কা’বা ঘরকে গিলাফ আবৃত করা হয়”।

সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আরজ করলেন, “হে রাসুল (সাঃ)! সেদিন তো আমরা আজকের চাইতে অনেক ভালো থাকবো। ইবাদত করার প্রচুর সুযোগ পাব। জীবিকার জন্য মেহনত করতে হবে না”।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ
“না। বরং সেদিনের তুলনায় এখনই তোমরা ভালো আছো। কারণ, এখন সম্পদের অভাব থাকলেও ঈমানের প্রাচুর্য আছে আর তখন সম্পদের প্রাচুর্য হবে তবে দৈন্যদশা হবে ঈমান আমলের”। (তিরমিজি শরীফ)

বাস্তব সত্য হল, আজ আল্লাহ তা’আলা অনেক মুসলমানকেই বিপুল সম্পদ দান করেছেন। এত সম্পদ দিয়েছেন, যদি আজীবন কামাই রোজগার নাও করে, দ্বীনিকর্ম ও ইবাদত-বন্দেগীতে ডুবে থাকে – তবুও অভাব হবে না। সাহাবায়ে কেরামের ভাষ্যমতে তারা চাইলে এখন সর্বদাই এবাদত-বন্দেগীতে ডুবে থাকতে পারে। অথচ তারা আজ মরণের পর যে একটা জীবন আছে সেটা যেন ভুলেই গেছে। তাদের চিন্তা ও জীবন জুড়ে কেবল ভালো খাবার, ভালো পোশাক ও ভালো গারি-বাড়ির নেশা! স্কুলের ড্রেস ভিন্ন, বেড়ানোর পোশাক ভিন্ন, ঘুমাবার পোশাক আলাদা! পোশাক আর খাদ্যের সে কি বিশাল ফিরিস্তি। সর্বক্ষণ ডুবে আছে এই একই নেশায়।
এসব ব্যস্ততার কারণে আল্লাহর সামনে সিজদাবনত হওয়া তো দূরের কথা সেই ভাবনাও নেই। এই জন্যেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ““না। বরং সেদিনের তুলনায় এখনই তোমরা ভালো আছো”।

বুখারি ও মুসলিম শরীফের একটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
“আল্লাহর কসম! তোমরা দরিদ্র হয়ে পড়বে সেটাকে আমি ভয় করি না। আমি ভয় করি এটাকে যে, তোমাদেরকে বিপুল পরিমানে বিত্ত বৈভব দেওয়া হবে – যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেওয়া হয়েছিল। তারপর তারা যেভাবে দুনিয়ার ফাদে পড়েছিল তোমরাও তেমনি দুনিয়ার ফাঁদে আটকা পড়বে। অতঃপর দুনিয়ার বিত্ত-বৈভব তাদেরকে যেভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরকেও তেমনি ধ্বংস করে ছাড়বে”।

তাজ্জবের বিষয় হল, আজকাল দরিদ্ররাও দ্বীন থেকে ততটাই দূরে অবস্থান করে যতটা দূরে বিত্তবানরা অবস্থিত। বরং দ্বীনের ব্যাপারে আরও অসহায় নিঃস্ব। এর বড় কারণ হল আজ কোথাও দ্বীনের পরিবেশ নেই। ধনী-গরীব সকলের ঘরেই এখন বদদ্বীন বিরাজ করছে।

আল্লাহ হেফাজত করুন।
@@@@@                                                                                                                                                              
ফেতনায় জড়িয়ে পড়ার আলামত:                                                                                                                                                                  
হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বলেছেন,
“ফেতনা মানুষের অন্তরসমূহের উপর আক্রমণ চালায়। তো যে অন্তর তাকে অপছন্দ করে, তাঁর মাঝে একটি সাদা দাগ পড়ে যায়। পক্ষান্তরে যে অন্তর তাতে ডুবে যায়, তাঁর মাঝে একটি কালো দাগ পড়ে”। (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২২৭)

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বলেছেন,
“কেউ যদি জানতে ইচ্ছা করে যে, ফেতনা তাকে গ্রাস করছে কিনা, তাহলে তা বুঝবার উপায় আছে। সে লক্ষ্য করবে, ইতিপূর্বে যে বিষয়কে সে হারাম জানত, এখন তাকে হালাল ভাবতে শুরু করেছে কিনা। যদি এমনটি হয়, তাহলে ধরে নেবে, ফেতনা তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। কিংবা যদি এমন হয় যে, ইতিপূর্বে একটি বিষয়কে হালাল জানত, এখন তাকে হারাম ভাবতে শুরু করেছে, তাহলেও বুঝবে, ফেতনা তাকে গ্রাস করেছে”। (মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১৫)

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) ফেতনায় জড়িত হওয়া না হওয়ার লক্ষন শিখিয়ে দিয়েছেন যে, হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম ভাবতে শুরু করা ফেতনায় জড়িয়ে পড়ার আলামত। ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকা এবং আত্মসংশোধনের এটি একটি উত্তম ব্যবস্থাপত্র।

যদি এমন হয় যে, আপনি ইতিপূর্বে সুদকে হারামই ভাবতেন এবং তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন, কিন্তু সুদ এখন আপনার কাছে গা-সহা মনে হচ্ছে এবং তাতে জড়িয়েও পড়ছেন, তাহলে আপনাকে নিশ্চিত ধরে নিতে হবে, সময়ের ফেতনা আপনাকে গ্রাস করে ফেলেছে, আর সেজন্যই আপনার মাঝে এই পরিবর্তন।

এক সময় আপনি পর্দার ব্যাপারে কঠোর ছিলেন, কিন্তু এখন কেমন যেন বেপর্দাকে দোষ বলে মনে হচ্ছে না। এমনটি হলে ধরে নিতে হবে, ফেতনা আপনাকে গ্রাস করে ফেলেছে। আপনি ফেতনায় জড়িয়ে পড়েছেন।

আল্লাহ আমাদেরকে ফেতনা থেকে দূরে রাখুন আর যে সকল ফেতনায় জড়িয়ে পড়েছি, তা থেকে যথা শীঘ্রই মুক্ত করুন।   .                                                                        

কুরআনকে জীবিকার উপায় হিসাবে গ্রহণ করবে:                                                                                      প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, একবার আমরা কুরআনে কারীম পাঠ করছিলাম। মজলিসে শহুরে আরবদের ছাড়াও গ্রাম্য আরব বাসিন্দা এবং কিছু অনারব লোকও ছিল। এমন সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাশরীফ আনেন। তিনি ইরশাদ করেনঃ “তিলওয়াত করতে থাক। শীঘ্রই এমন একটা কাল আসবে যখন মানুষ কুরআনকে তীরের মত সোজা করবে (অর্থাৎ অক্ষরগুলো আদায়ে যারপরনাই গুরুত্ব দেবে)। অথচ কুরআন তিলওয়াত দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হবে দুনিয়া হাসিল করা। তারা কুরআন তিলওয়াত দ্বারা নিজেদের আখিরাত সাজাবার কথা ভাববে না”। (বাইহাকী শরীফ)

অন্য একটি হাদিসে আছে, হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “আবার খুব দ্রুত এমন একটা কাল আসবে যখন মানুষ পবিত্র কুরআনকে গান এবং বিলাপের ভঙ্গিতে পাঠ করবে। অথচ তাদের তিলওয়াত তাদের কণ্ঠনালীর উপরে যাবে না (অর্থাৎ আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না)। এই তিলওয়াতকারী এবং তার শ্রোতাদের অন্তর ফেতনায় নিপাতিত হবে”। (মিশকাত শরীফ)

 পূর্ববর্তী জাতিসমূহের রীতি নীতি অবলম্বন করা : 
 হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “নিঃসন্দেহে তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের রীতির অনুসরণ করবে – এক বিঘতের বিপরীতে এক বিঘত, এক হাতের বিপরীতে এক হাত ( অর্থাৎ হুবহু)। এমনকি তারা যদি কোন গুই সাপের গর্তে প্রবেশ করে, তোমরা তারও অনুসরণ করবে”। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি ইহুদি খ্রিষ্টানদের কথা বলছেন? উত্তরে তিনি বললেন, “আর কারা?”

(সহীহ বুখারী খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১২৭৪; সহীহ মুসলিম খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২০৫৪; সহীহ ইবনে হিব্বান খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ১৯৫)

পূর্ববর্তী উম্মত, তথা ইহুদি খ্রিষ্টান যেসব ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিল, বর্তমান যুগের মুসলমানরাও সেসব ব্যাধিতে আক্রান্ত। যেমনঃ:

আল্লাহর আইনকে বাদ দিয়ে মানব রচিত সংবিধান (বেশির ভাগই পশ্চিমাদের আদলে রচিত), পোশাক পরিচ্ছদ, সামাজিক রীতি, ফ্যাশন, ব্যাভিচার, বিবাহপূর্ব সম্পর্ক (গার্ল ফ্রেণ্ড বয় ফ্রেন্ড রীতি) ,মদপান ,জুয়া, বেঈমানি , অন্যায় হত্যা , আল্লাহর কিতাবের বিকৃতি সাধন, নবীর আদর্শ ও শিক্ষায় মনগড়া সংযোজন-বিয়োজন >দীনের সেই বিষয়গুলোর উপর হামলা করা , নিজের কাছে যে জিনিস ভালো লাগে তা মানা আর যেগুলো কষ্টকর বলে মনে হয় তা পরিত্যাগ করা , এতিম বিধবাদের সম্পদ ভোগ করা ইত্যাদি।
আজ বিশ্বব্যাপী আমরা এই চিত্র প্রত্যক্ষ করছি। কুরআন শুনিয়ে আল্লাহর ঘর মসজিদে পয়সা চাওয়া হচ্ছে। মৃতের দু’আ অনুষ্ঠানে কুরআন খতম করিয়ে মানুষ নাম ফুটাচ্ছে। তারাবীহ নামাজে কুরআন শুনিয়ে জীবিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিলাওয়াতের সময় মাখরাজ উচ্চারণ ও শিল্পভঙ্গির প্রতি পূর্ণ বরং অতিরিক্ত মাত্রায় লক্ষ্য রাখা হচ্ছে অথচ তার মর্ম বুঝা কিংবা তার উপর আমল করার প্রতি বিন্দুমাত্র লক্ষ্য নেই। এই দৃশ্য বড়ই বেদনাদায়ক।.                                                                                                                                        

খোরাসানঃ ইমাম মাহদির হাতে বাইয়াত ও যুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে হাদিস ও সেখানে দাজ্জালি এডভান্স ফোর্সের বর্তমান কার্যক্রম মূলত রাসুল (সাঃ) এর যুগে বৃহত্তর খোরাসান বলতে এর সীমানা নিম্ন লিখিত ভূখণ্ডের সমষ্টিকে বুঝায়, যার মূল কেন্দ্র হচ্ছে বর্তমান আফগানিস্তান। বিস্তৃতি নিম্নরূপঃ
     
“উত্তর-পশ্চিম আফগানিস্তান (হেরাত, বালখ, কাবুল, গাজনি, কান্দাহার দিয়ে বিস্তৃত), উত্তর ও দক্ষিন-পূর্ব উজবেকিস্তান (সামারকান্দ, বুখারা, সেহরিসাবজ, আমু নদী ও সীর নদীর মধ্যাঞ্চল দিয়ে বিস্তৃত), উত্তর-পূর্ব ইরান (নিশাপুর, তুশ, মাসহাদ, গুরগান, দামাঘান দিয়ে বিস্তৃত), দক্ষিন তুর্কমেনিস্তান (মেরি প্রদেশ – মার্ভ, সানজান), দক্ষিন কাজিকিস্তান, উত্তর ও পশ্চিম পাকিস্তান (মালাকান্দ, সোয়াত, দীর ও চিত্রাল), উত্তর পশ্চিম তাজিকিস্তান (সুগ্ধ প্রদেশের খোজান্দ, পাঞ্জাকেন্ত দিয়ে বিস্তৃত)”।

আসুন, প্রথমে আমরা খোরাসান ও সেখান থেকে বাহিনী বের হওয়া, ইমাম মাহদির নিকট বাইয়াত গ্রহণের ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা এবং সেই খোরাসানী বাহিনীর গন্তব্য সম্বলিত হাদিসগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেই।

আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“পূর্বদিক (খোরাসান) থেকে কিছু লোক বের হয়ে আসবে, যারা ইমাম মাহদির খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা সহজ করে দিবে”।

(সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৩, হাদিস নং ২৮৯৬; সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ৩, হাদিস নং ৪০৮৮)

অপর বর্ণনায়, হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“যখন তোমরা দেখবে, কালো পতাকাগুলো খোরাসানের দিক থেকে এসেছে, তখন তাদের সাথে যুক্ত হয়ে যেও। কেননা, তাদেরই মাঝে আল্লাহর খলীফা মাহদি থাকবে”।

(মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৭৭; কানজুল উম্মাল, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২৪৬; মিশকাত শরীফ, কেয়ামতের আলামত অধ্যায়)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, একদা আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উনি বলতে ছিলেন,

“ঐ দিক থেকে একটি দল আসবে (হাত দিয়ে তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করলেন)। তারা কালো পতাকাবাহী হবে। তারা সত্যের (পূর্ণ ইসলামী শাসনের) দাবী জানাবে, কিন্তু তাদেরকে দেওয়া হবে না। দুইবার বা তিনবার এভাবে দাবী জানাবে, কিন্তু তখনকার শাসকগণ তা গ্রহণ করবে না। শেষ পর্যন্ত তারা (ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব) আমার পরিবারস্থ একজন লোকের (ইমাম মাহদির) হাতে সোপর্দ করে দিবে। সে জমিনকে ন্যায় এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে ভরে দিবে, ঠিক যেমন ইতিপূর্বে অন্যায় অত্যাচারের মাধ্যমে ভরে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ঐ সময় জীবিত থাকো, তবে অবশ্যই তাদের দলে এসে শরীক হয়ে যেও – যদিও বরফের উপর কনুইয়ে ভর দিয়ে আসতে হয়”।

(আবু আ’মর আদ দাইনিঃ ৫৪৭, মুহাক্কিক আবু আবদুল্লাহ সাফেঈ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)

হযরত হাসান (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রিবারস্থ (আহলে বাইত) লোকদের উপর আশু বিপদাপদের বর্ণনা দিচ্ছিলেন,

“শেষ পর্যন্ত আল্লাহ পাক পূর্বদিক থেকে কালো পতাকাবাহী লোকদেরকে পাঠাবেন। যারা ঐ কালো পতাকাবাহী লোকদেরকে সাহায্য করল, আল্লাহ তায়ালাও তাকে সাহায্য করবেন। যে তাকে ছেড়ে দিল, আল্লাহ তায়ালাও তাকে ছেড়ে দেবেন। তারপর ঐ কালো পতাকাবাহী দল এমন এক ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) এর কাছে আসবে – যার নাম আমার নামের মতো হবে। তারা ঐ ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) এর উপর শাসনব্যবস্থার দায়িত্ব সোপর্দ করবে। সুতরাং, আল্লাহ তায়ালাও তাদেরকে সহযোগিতা করবেন”।

(আলফিতান, নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদঃ ৮৬০)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদিন আমরা আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত হলাম। এ সময়ে বনু হাশিমের কয়েকজন যুবক এসে হাজির হল। তাদের দেখার পর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখদুটো লাল হয়ে গেল এবং চেহারার রং বদলে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, এই অবস্থা দেখে আমি বললাম, ‘আমরা আপনার চেহারায় অপ্রীতিকর কিছু দেখতে পাচ্ছি যে!’

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

“আমরা আহলে বাইতের জন্য আল্লাহ দুনিয়ার পরিবর্তে আখিরাতকে নির্বাচন করেছেন। আমার পরিবারের সদস্যরা আমার অবর্তমানে বিপদ, দেশান্তর ও অসহায়ত্বের শিকার হবে। এমনকি পূর্ব দিক থেকে এমন কিছু লোক আগমন করবে, যাদের পতাকা হবে কালো। তারা কল্যাণ (নেতৃত্ব) প্রার্থনা করবে; কিন্তু এরা (বনু হাশিম) দেবে না। অগত্যা তারা যুদ্ধ করবে ও জয়লাভ করবে। এবার তারা যা (নেতৃত্ব) প্রার্থনা করেছিল, (বনু হাশিম) তা প্রদান করবে। কিন্তু এবার তারা তা (নেতৃত্ব) গ্রহণ না করে আমার বংশের এক ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) কে তা (নেতৃত্ব) ফিরিয়ে দিবে। সেই ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) পৃথিবীটাকে ন্যায়নীতি দ্বারা এমনভাবে ভরে দিবে, যেমনটি পূর্বে তা অবিচারে পরিপূর্ণ ছিল। তোমাদের যে লোক সেই সময়টি পাবে, সে যেন উক্ত বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যায় বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে হলেও”।

(সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৬)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“যখন কালো পতাকাগুলো পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে বের হবে, তখন কোন বস্তু তাদেরকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না। এমনকি এই পতাকাকে ইলিয়ায় (বাইতুল মুকাদ্দাসে) উত্তোলন করা হবে (খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবে)”।

(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২২৬৯;মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৮৭৬০)

প্রতিহত করতে না পারলেও সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা তৈরির ব্যাপারে বর্ণনা এসেছে। ইমাম জুহরি বলেছেন, আমার কাছে এই বর্ণনা পৌঁছেছে যে,

“খোরাসান থেকে কালো পতাকা বের হবে। সেটি যখন খোরাসানের ঘাঁটি থেকে অবতরণ করবে, তখন ইসলামের খোঁজে অবতরণ করবে। কোন বস্তু তাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না অনারবদের পতাকাগুলো ব্যতীত, যেগুলো পশ্চিম দিক থেকে আসবে”।

(কানাজুল উম্মাল, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ১৬২)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে অবশ্যই কালো পতাকাবাহী দল আসবে। ঘোড়ার সিনা পর্যন্ত রক্তে ডুবন্ত থাকবে”।

(মাজমাউজ জাওয়াইদ)

হযরত বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আমার পরে অনেক বাহিনী আসবে। তোমরা অবশ্যই খোরাসানের বাহিনীকে যোগ দিবে”।

(ইবনে আদি)

ইমাম যুহরি বলেছেন,

“পূর্ব থেকে কালো পতাকা এগিয়ে আসবে, যাদের নেতৃত্ব দেবে এমন এক দল লোক, যারা হবে ঝুলপরিহিত খোরাসানি উস্ট্রীর মতো, লম্বা চুল ও দাঁড়ি বিশিষ্ট। তাদের বংশ হবে গ্রামীণ আর নাম হবে উপনাম। তারা দামেস্ক নগরীকে জয় করবে। তাদের থেকে তিন ঘণ্টার জন্য রহমত প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে”।

(আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২০৬)

খোরাসান থেকে বের হওয়া এই কালো পতাকাবাহী এই বাহিনী ইমাম মেহেদীর হাতে বাইয়াত গ্রহণের পূর্বে ইরাকের কুফা নগরীতে সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রীয় কুরায়শি শাসকের (হাদিসের বর্ণনাগুলোতে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে এসেছে) মোকাবিলা করবে।

আরতাত (রাঃ) বলেন,

“সুফিয়ানি কুফায় প্রবেশ করবে। তিনদিন পর্যন্ত সে দুশমনদের বন্দীদেরকে সেখানে আটকে রাখবে এবং সত্তর হাজার কুফাবাসীকে হত্যা করে ফেলবে। তারপর সে আঠার দিন পর্যন্ত আঠার দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তাদের (কুফাবাসীদের) সম্পদগুলো বণ্টন করবে। তাদের (কুফাবাসীদের) মধ্যে একদল খোরাসানে ফেরত যাবে। সুফিয়ানির সৈন্যবাহিনী আসবে এবং কুফার বিল্ডিংগুলো ধ্বংস করে সে খোরাসানবাসীদেরকে তালাশ করবে। খোরাসানে একটি দলের আবির্ভাব ঘটবে, যারা ইমাম মাহদির দিকে আহ্বান করবে। অতঃপর মাহদি ও মানসুর (একজন সেনাপতি) উভয়ে উভয়ে কুফা থেকে পলায়ন করবে। সুফিয়ানি উভয়ের তালাশে সৈন্য প্রেরণ করবে। অতঃপর যখন মাহদি ও মানসুর মক্কায় পৌঁছে যাবে, তখন সুফিয়ানির বাহিনীকে ‘বায়দা’ নামক স্থানে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মাহদি মক্কা থেকে বের হয়ে মদিনায় যাবেন এবং ওখানে বনু হাশেমকে মুক্ত করবেন। এমন সময় কালো পতাকাবাহী লোকেরা এসে পানির উপর অবস্থান করবে। কুফায় অবস্থিত সুফিয়ানির লোকেরা কালো পতাকাবাহী দলের আগমনের কথা শুনে পলায়ন করবে। কুফার সম্মানিত লোকেরা বের হবে যাদেরকে ‘আসহাব’ বলা হয়ে থাকে, তাদের কাছে কিছু অস্ত্র শস্ত্রও থাকবে এবং তাদের মধ্যে বসরা’বাসীদের থেকে একজন লোক থাকবে। অতঃপর কুফাবাসী সুফিয়ানির লোকদেরকে ধরে ফেলবে এবং কুফার যে সব লোক তাদের হাতে থাকবে, তাদেরকে মুক্ত করবে। পরিশেষে কালো পতাকাবাহী দল এসে মাহদির হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে”।

(আল ফিতানঃ ৮৫০, মুহাক্কিক আহমদ ইবনে সুয়াইব এই হাদিসটির সনদকে ‘লাবাসা বিহা’ বা ‘বর্ণনাটি গ্রহণ করা যেতে পারে’ বলেছেন)

‘মানসুর’ সম্পর্কে হযরত হিলাল ইবনে আমর বর্ণনা করেন, আমি হযরত আলী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“এক লোক মা-আরউন্নহর (নদীর ওপার) থেকে রওনা হবে, যার নাম হবে হারছ হাররাছ। তার বাহিনীর সম্মুখ অংশের সেনাপতির নাম হবে মানসুর, যে (খেলাফত বিষয়ে) মুহম্মদ বংশের জন্য পথ সুগম করবে বা শক্ত করবে, যেমনটি কুরাইশ আল্লাহর রাসুলকে ঠিকানা দান করেছিল। তার সাহায্য সহযোগিতা করা কিংবা তার ডাকে সাড়া দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য বলে বিবেচিত হবে”।

(সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং ৪২৯০)

আমু নদীর ওপারে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে ইসলামের পরিভাষায় ‘মা-আরউন্নহর’ বা ‘নদীর ওপার’ বলা হয়। উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,কাজিকিস্তান এর অন্তর্ভুক্ত যা কিনা বৃহত্তর খোরাসানের একটি অংশ।

মুহম্মদ বিন হানাফিয়্যা (রহঃ) বলেন,

“বনু আব্বাস থেকে পতাকাবাহী দল বের হবে। অতঃপর খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহী অন্য আরেকটি দল আত্মপ্রকাশ করবে। তাদের পাগড়ীগুলো কালো বর্ণের হবে এবং জামা সাদা বর্ণের হবে। কালো পতাকাবাহী দল সুফিয়ানি (সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রীয় কুরায়শি শাসক) এর সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে দেবে। শেষ পর্যন্ত তারা বাইতুল মুকাদ্দাসে এসে উপস্থিত হবে এবং তাদের নেতৃত্ব ইমাম মাহদির হাতে সোপর্দ করে দেবে। তাদের কাছে সিরিয়া থেকে তিনশত লোক আসবে। এদের(খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহী) বের হওয়া এবং মাহদির হাতে নেতৃত্ব সোপর্দ করার মাঝে ৭২ মাসের (৬ বছরের) ব্যবধান থাকবে”।

(কিতাব আল ফিতানঃ ৮৫১, দুর্বল হাদিস)

হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“তোমাদের ধনভাণ্ডারের নিকট তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কিন্তু ধনভাণ্ডার তাদের একজনেরও হস্তগত হবে না। তারপর পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে কতগুলো কালো পতাকা আত্মপ্রকাশ করবে। তারা তোমাদের সাথে এমন ঘোরতর লড়াই লড়বে, যেমনটি কোন সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে লড়েনি”।

বর্ণনাকারী বলেন, তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেন,

“তারপর আল্লাহর খলীফা মাহদির আবির্ভাব ঘটবে। তোমরা যখনই তাঁকে দেখবে, তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদি এজন্য তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যেতে হয়, তবুও যাবে। সে হবে আল্লাহর খলীফা মাহদি”।

(সুনানে ইবনে মাজা; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন,

“কালো পতাকা পূর্ব দিক থেকে আর হলুদ পতাকা পশ্চিম দিক থেকে আগমন করবে। সিরিয়ার কেন্দ্রভূমি তথা দামেস্কে উভয় পক্ষের মোকাবিলা হবে”।

(আল ফিতান, নুয়া’ইম ইবনে হাম্মাদ)

উমর বিন মুররাহ আল জামালী (রাঃ) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“নিশ্চই খোরাসান থেকে একদল কালো পতাকাবাহী লোকের আবির্ভাব ঘটবে এবং তাঁদের একদল তাঁদেরঘোড়াগুলো দড়ির সাহায্যে বাইতাল লাহ্যিয়া (গাজা, ফিলিস্তিন) এবং হারাস্তার (দামেস্ক, সিরিয়া) মধ্যবর্তীস্থানে জাইতুন গাছের সাথে বাধবে”।
 আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সেখানে কি কোন জাইতুন গাছ আছে’?
 তিনি বলেন,
“যদি সেখানে জাইতুন গাছ নাও থাকে তাহলে শীঘ্রই সেখানে জাইতুন গাছ জন্মাবে এবং খোরাসান থেকে কালোপতাকাবাহী দল বের হয়ে আসবে এবং তারা তাঁদের ঘোড়াগুলো এইসব জাইতুন গাছের সঙ্গে বাঁধবে”।

(কিতাব আল ফিতানঃ ৮৬১, পৃষ্ঠা ২১৫, দুর্বল হাদিস)

উপরের সবগুলো হাদিস সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করলে যেটা প্রতীয়মান হয়, তা হলঃ
  • খোরাসানের থেকে যে বাহিনীটি বের হবে তাদের হাতে কালো পতাকা থাকবে।
  • তাদের পাগড়ীগুলো কালো বর্ণের হবে এবং জামা সাদা বর্ণের হবে।
  • তাদের পোশাক ঢিলে ঢালা হবে, চুল ওয়ালা হবে, তাদের বংশ গ্রামীন হবে।
  • আসল নামের পরিবর্তে তারা উপনামে পরিচিত হবে।
  • যদিও তাদের কেউ প্রতিহত করতে পারবে না, কিন্তু  প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে পশ্চিমা শক্তি।
  • তারা এ সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে ঠিকই খোরাসান থেকে বের হয়ে ইরাকের দিকে এগুবে।
  • এরপর তাদের (কালো পতাকাবাহী খোরাসানিদের দলের) কোন এক নেতা যার নাম হবে ‘মানসুর’, সে ইমাম মাহদিকে সহায়তা করবে। মানুষদেরকে তার দিকে ডাকবে।
  • এক পর্যায়ে এই কালো পতাকাবাহী খোরাসানিদের সঙ্গে ইমাম মাহদি (যদিও তখনও তার আত্মপ্রকাশ ঘটেনি, শুধু কালো পতাকাবাহী খোরাসানিদের দলে মিশে আছেন) নিয়েই মক্কাতে পৌছবে।
  • সেখানে কোন এক খলীফার তিনপুত্রের দ্বন্দের প্রেক্ষিতে যখন হজ্জ মৌসুমে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। এবং তার সাথে উপস্থিত থেকে এই খোরাসানের কালো পতাকাবাহীরাই প্রথম বাইয়াতের সৌভাগ্য অর্জন করবে। (পরবর্তীতে ঘটনার পরিক্রমায় সিরিয়ার ‘আবদাল’ বা শ্রেষ্ঠ  মুসলমানগণ ও ইরাকের‘আসাইব’ বা সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ মক্কায় এসে ইমাম মাহদির নিকট বাইয়াত হবে)।
  • এরপর এই খোরাসানের কালো পতাকাবাহী বাহিনীসহ ইরাকে গমন করে সে অঞ্চলকে মুক্ত করবেন।  
  • পরে তিনি সিরিয়ার অভিমুখে যাত্রা করে বনু কাল্ব গোত্রীয় কুরায়শি শাসক এর সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে দেবে। (যা হাদিসে ‘কালবের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত)।
  • যেহেতু এই বাহিনী ইমাম মাহদির নেতৃত্বাধীন থাকবে, হাদিসে বর্ণিত সকল যুদ্ধেই এই কালো পতাকাবাহী খোরাসানি বাহিনীর সকল যোদ্ধা ইরাক, বৃহত্তর সিরিয়া (সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, প্যালেস্টাইন, বাইতুল মাকদিস বা জেরুজালেম) তে কাল্বের যুদ্ধ, পেছন দিককার শত্রুর সাথে যুদ্ধ, রোমানদের (পশ্চিমা খ্রিস্টানদের) সাথে মহাযুদ্ধ থেকে শুরু করে ইস্তাম্বুল বিজয় পর্যন্ত সব যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবে। কারণ, তারা ইমাম মাহদির খেলাফত প্রতিষ্ঠাকে সহজ করে দিবেন। এবং সর্বশেষে সকল বিজয়ের পর যখন জেরুজালেমে খেলাফত প্রতিষ্ঠা হবে, তখন তারা সেখানে এই কালো পতাকা উড়িয়ে তাদের ঘোড়াগুলোকে জাইতুন গাছের সাথে বেধে তারা ক্ষান্ত হবে।

যেহেতু খোরাসানের এই বাহিনী ইমাম মাহদির সঙ্গী হবে তাতে বুঝা যায় যে, এটি শেষ জামানার অংশ হিসাবে হতে হবে। আসুন, আমরা একটু মিলিয়ে নেই, হাদিসের ধারাবাহিকতায় আমরা কোন জামানায় বসবাস করছি। অন্যথায়, খোরাসান থেকে যে বাহিনীই কালো পতাকা নিয়ে বের হোক না কেন তার গুরুত্ব অনুধাবন করা যাবে না।

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“নবুওয়াত ব্যবস্থা তোমাদের মাঝে ততদিন থাকবে, যতদিন আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেন। অতঃপর যখন ইচ্ছা, তখন তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর) তোমাদের মাঝে নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে এবং তা আল্লাহ তাআলা যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (খুলাফায়ে রাশিদিন এর যুগ)। অতঃপর তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর হানাহানির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা আল্লাহ তাআলার যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (রাজতন্ত্র)। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তার বিলুপ্তি ঘটবে। তারপর জবর দখল তথা আধিপত্য বিস্তারের রাজত্ব কায়েম হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াতে কিছুকাল বিরাজমান থাকবে (নানা ভূখণ্ডে বর্তমান একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকগণ) । তারপর যখন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, তখন এরও অবসান ঘটবে। অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত রাষ্ট্র-ব্যবস্থা কায়েম হবে। এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন”।
(মুসনাদে আহমদঃ ৪/২৭৩)

আর তাছাড়া অপর হাদিসে, হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) এবং মু’আজ বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“ইসলামের সূচনা হয়েছে নবুওয়াত ও রহমতের শাসনের মাধ্যমে। এরপর হবে খেলাফত ও রহমতের শাসন। এরপর হবে অত্যাচার লুটেরা বাদশাদের শাসন। এরপর হবে অহংকারী প্রভাবশালী বাদশাদের শাসন, তখন জমিনে অন্যায়, অবিচার, ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়বে। সেকালের লোকেরা রেশম (সিল্ক), ব্যভিচার (পরকীয়ার পাশাপাশি বয়ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ডের নামে চলমান বহুল প্রচলিত সামাজিকভাবে স্বীকৃত উঠতি বয়সী অবিবাহিতদের জেনা) এবং মদকে হালাল করে ফেলবে। আল্লাহর সাথে সাক্ষাত পর্যন্ত এর মাধ্যমেই তাদেরকে রিজিক দেওয়া হবে এবং সাহায্য করা হবে”। (শুয়াইবুল ঈমান আল বায়হাকি, ৫/১৬)

এবার আমরা খোরাসানের দিকে তাকাই। আশির দশকে খোরাসানের কেন্দ্রস্থল আফগানিস্তান সমাজতন্ত্র নামক পাগলা ঘোড়ার সওয়ার তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারা আক্রান্ত হয়। দীর্ঘ দশ বছরের (১৯৭৯ – ১৯৮৯) যুদ্ধের পর পরাশক্তি  সোভিয়েত ইউনিয়ন শুধু পরাজিতই হয়নি, কয়েক বছরের মাথায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে আমু নদীর ওপারে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার দেশগুলো যাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘মা-আরউন্নহর’ বা ‘নদীর ওপার’ বলা হয়, সে সব দেশঃ উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,কাজিকিস্তান এর অন্তর্ভুক্ত যা কিনা বৃহত্তর খোরাসানের একটি অংশ, সমাজন্ত্রমুক্ত হয়ে স্বাধীনভূখণ্ডরূপে আত্মপ্রকাশ করে। যদিও এই যুদ্ধকে মুসলিম জাহান ধর্মযুদ্ধ হিসাবে গ্রহণ করে এবং ‘সে যেন উক্ত বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে যায় বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে হলেও’ এর উপর আমল করার মতোই সকল মুসলিম ভূখণ্ড হতে মুজাহিদরা আগমন করে। যদিও এদের কারও হাতেই কালো পতাকা ছিল না।

১৯৮৯ সালে রাশিয়ানরা ফিরে গেলে তাদের দালালদেরকে কাবুল থেকে হটিয়ে ১৯৯২ সালে ইসলামিক স্টেট অফ আফগানিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে একটি রঙ্গিন পতাকা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকের মধ্যে পশ্চিমারা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। আর একে কেন্দ্র করে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয় এবং দেশের আইন শৃঙ্খলার ব্যপক বিপর্যয় দেখা যায়। একদিকে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের পুনর্গঠনের চ্যলেঞ্জ অন্যদিকে যুদ্ধ ফেরত নেতাদের ‘রকমারি বাদ আর তন্ত্র’ এর উপর ভিত্তি করে ক্ষমতার লড়াই।

অবশেষে গ্রাম্য এক কওমি মদ্রাসার শিক্ষক গুটি কয়েক দরিদ্র ছাত্রদের নিয়ে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। একের পর এক প্রদেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে। অবশেষে ১৯৯৬ সালে কাবুলের নিয়ন্ত্রন নেওয়ার পর তারা দেশের আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রনের ঘোষণা দেয়। জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত রঙ্গিন পতাকা হটিয়ে উড়িয়ে দেয় ইসলামিক ভূখণ্ডের সত্যিকার পতাকা ‘লিওয়া’ – সাদার ভিতরে কালো  রঙ্গের কালিমা খচিত।  আর সেনাবাহিনীর পতাকা হল ‘ আর রায়া’ – কালোর ভিতরে সাদা রঙ্গের কালিমা খচিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যুদ্ধের সময় কালো পতাকা ব্যবহার করতেন, যা ‘উকাবা’ নামে পরিচিত।

শুরু হল খোরাসানের কেন্দ্রস্থলে কালো পতাকাবাহী দলের যাত্রা। পশ্চিমা বিশ্ব হারালো তাদের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রন। শুরু হল দাজ্জালি মিডিয়ার প্রচার যুদ্ধ। মিডিয়াতে দেখাতে লাগলো এই দলকে। কিন্তু এ কারা। জামা সাদা বর্ণের আর পাগড়ীগুলো কালো বর্ণের। পোশাক ঢিলে ঢালা , অনেকেই চুল ওয়ালা, পশ্চিমা মিডিয়াই বিশ্বকে জানিয়ে দিল এরা সব পশ্চাৎপদ গ্রামীন। মাদ্রাসার ছাত্র। আরবীতে বলে ‘তালিব এ ইলম’। আর বহু বচন ‘তালিবান’। আর পশ্চিমা মিডিয়া বিশ্বের সামনে এদেরকে এই ‘তালিবান’ উপনামে পরিচয় করিয়ে দিল (আসল নামের পরিবর্তে তারা উপনামে পরিচিত হবে)।
পশ্চিমা মিডিয়ার বদৌলতে জানা গেল তাদের শাসন ব্যবস্থায় তাদের কঠোর অবস্থান। কিন্তু বিচার হয় কাফের, মুনাফিক আর ফাসেকদের হৃদয় কাঁপানো আইন – শরিয়াহ আইনে। শুরু হল চতুর্মূখী অপপ্রচার। এবং প্রথমেই বেঁছে নেওয়া হল সেই পুরনো অস্ত্র নারী শিক্ষা। পশ্চিমা মিডিয়ার বদৌলতে সারা বিশ্বে জানানো হল এরা ‘নারী শিক্ষা’ ও ‘কর্মক্ষেত্রে নারী’ এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আমি নিজেও জানতাম তাই। অথচ সত্য কখনও চাপা থাকে না।

২০০১ সালে তালেবানদের পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের মুখপাত্র সাইয়েদ রহমতুল্লাহ হাশেমী যখন যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনার জন্য যান, তখন তিনি ১০ ই মার্চ ২০০১ এ ক্যালিফোর্নিয়া উনিভার্সিটিতে একটি পাবলিক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। যার ভিডিও ইউটিউবে আসে কেবল ২০১১ এর ১ লা এপ্রিলে (১০ বছর পর!!!!)। 

৪১ মিনিট ১০ সেকেন্ডের এই ভিডিওর ১৪ মিনিট থেকে সে তুলে ধরেন কোন কোন মন্ত্রালয়ে নারীরা কাজ করছে। মেডিকেলসহ কোন কোন ক্ষেত্রে ছাত্রর চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। Taliban Spokesman in University of Southern California লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে ইনশাল্লাহ পাওয়া যাবে।
শুধু তাই নয়, তখন তিনি  নিউ ইয়র্কের  এক টিভি চ্যানেলে চার্লি রোজ এর সাথে একটি সাক্ষাতকার দেন। সেখানেও কিছু অপ্রিয় সত্য সামনে এসেছে। সেই ভিডিও ইউটিউবে এসেছে ১০ বছর পর ৩১ শে জুলাই ২০১১ সালে। Taliban representative in an interview with Charlie Rose লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে ৩ টি পার্টে ইনশাল্লাহ পাওয়া যাবে।

এমন কি একজন ব্রিটিশ মহিলা সাংবাদিক ইভোনি রিডলি, গোয়েন্দা সন্দেহে তাদের হাতে বন্দি হন এবং তালেবান নেতা মোল্লা উমর এর সাক্ষাত লাভে সক্ষম হন। বন্দি হতে মুক্তির বেশ পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনিও নিজে মুখে বর্ণনা করেছেন তিনি আফগানিস্তানে কি দেখেছেন।Yvonne Ridley - From Captive to Convert লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে উনার অভিজ্ঞতা বর্ণনার ভিডিও  ইনশাল্লাহ পাওয়া যাবে। .....................

যাই হোক, সময় গড়িয়ে এল ২০০১। এবার সরাসরি প্রতিবন্ধকতার পালা। (যদিও তাদের কেউ প্রতিহত করতে পারবে না, কিন্তু যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে পশ্চিমা শক্তি)। 

২০০১ এ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সমগ্র পশ্চিমা জোটের স্থল ও আকাশ যোগে আক্রমণ। জোট ও তাদের মিত্রদের (জাতীয়তাবাদী) পতাকার সংখ্যা ২০১১ সালে এক পর্যায়ে ৪৯ এ এসে ঠেকলঃ আলবেনিয়া, আরমেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বেলজিয়াম, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এল সালভাদর, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জর্জিয়া, জার্মানি, গ্রীস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জর্ডান, রিপাবলিক অব কোরিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবারগ, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, মন্তেনিগ্রো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া রিপাবলিক অফ মেসিডোনিয়া, টোঙ্গা, তুর্কি, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। নাম দেওয়া হল ISAF (International Security Assistance Force).

এর মাঝে বৃহত্তর খোরাসানের সিমারেখার মধ্যে কালো পতাকাবাহীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বর্তমানে আফগানিস্তানে দাজ্জালি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরতদের মধ্যে একটি বড় অংশ উজবেকিস্থান, কাজাকিস্থান, তুর্কমেনিস্থান, তাজিকিস্থান থেকে আগত। আর সর্বশেষ সংযোজন পাকিস্তানের সোয়াত এলাকার তালিবানরা।
১৫ ই জুন ২০০৯ থেকে ২৩ শে জুলাই ২০১০ পর্যন্ত সর্বশেষ ISAF প্রধান জেনারেল স্ট্যানলি ম্যাক ক্রিস্টাল (Stanley A. McChrystal) অবসরের পর The Real News Network (www.therealnews.com) সাক্ষাতকারে বলেনঃ
“He (Obama) now believes very strongly that united states has to get out, there is no way that US is going to win in Afganistan, no way they can win in Pakistan either, that the US has no understanding of the forces that unleashed in Afganistan, does not understand the Poshtun population”.

সাক্ষাতকারটি দেখতে হলে The Light Reloaded Pt. 7 (The Battle For Khorasan) লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে ৯ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপের ২ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডে এটি দেখা যাবে ইনশাল্লাহ। ..



এখন পর্যন্ত ৪৯ টি দেশের অনেকেই চলে গেছে আফগানিস্তান ছেড়ে। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৪ সালের শেষ পর্যন্ত সকল সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেছে। 

২০১৪ সালে সকল বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের পর যদি আফগানিস্তান এই কালো পাগড়ী সাদা জামা ওয়ালা কালো পতাকামুক্ত হয়, তাহলে এরা হাদিস মোতাবেক সেই বাহিনী নয়। 
কিন্তু যদি এর পরে তারা আবার ক্ষমতা নিয়ে নেয়, তাহলে তারা ৪৯ টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত সেই পশ্চিমা জোট বাহিনীর পরাজয় হবে। তাহলে আর মাইক দিয়ে বাড়ি বাড়ি বলতে হবে না, এরা হাদিসের শর্ত ‘যদিও তাদের কেউ প্রতিহত করতে পারবে না, কিন্তু যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে পশ্চিমা শক্তি’ পূরণ করে ফেলবে। 

খেয়াল করার বিষয় হল, বর্তমানে ঠিক সিরিয়াতে যখন বনু কাল্ব গোত্রের শাসক বাশার আল আসাদ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আর সাথে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত (পূর্বের লিখাতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে), খোরাসানের এই যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে জুন ২০১৩ তে ১২০জন যোদ্ধা সিরিয়াতে যোগ দেয়। (সূত্রঃ ডন, জুলাই ১৪, ২০১৩)। 

আর এই বাহিনী যদি ইমাম মাহদি আগমনের পূর্বে আত্মপ্রকাশকৃত সেই বাহিনী হয়, তবে তাদেরকে আর একটি শর্ত পূরণ করতে হবে। হযরত ইয়াজিদ ইবনে সানাদি বর্ণনা করেন, হযরত কাব (রাঃ) বলেছেন,

“মাহদির আত্মপ্রকাশের একটি লক্ষণ হল, পশ্চিম দিক থেকে পতাকা আসবে। বনু কানদা’র এক খোঁড়া ব্যক্তি সেই বাহিনীর নেতৃত্ব দেবে”।

(আস সুনানুল ওয়ারিদাতুল ফিল ফিতান)

অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হল, ২০০১ সালে যখন পশ্চিমারা খোরাসানের এই কালো পতাকাবাহী বাহিনীটিকে আক্রমণ করে তখন তাদের জয়েন্ট চীফ কমান্ডার ছিল এয়ার ফোর্স জেনারেল রিচার্ড মাইয়ের (Richard Myers)। তার এক পা খোঁড়া।

সে জন্ম গ্রহণ করে কানসাস শহরে যার কিনা কানাডার সাথে সীমানা এবং এই শহরের বেশির ভাগ অধিবাসী কানাডা থেকে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে সেই শুরু থেকে। আর কানাডাকে আরবীতে ‘কানদা’ (كندا)  বলে। বাকিটা আল্লাহই ভালো জানেন। 

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বর্ণিত বিস্তারিত হাদিসে আছে, আ’মাক যুদ্ধে আল্লাহ কাফেরদের উপর উপর ফোরাতের কূল থেকে খোরাসানি ধনুকের সাহায্যে তীর বর্ষণ করবে। 

অথচ আ’মাক (সিরিয়ায় আলেপ্পোতে তুরস্কের সীমানার কাছাকাছি গ্রাম) থেকে ফোরাতের নিকটতম তীরের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। সাধারণ কোন তীর ধনুকের দ্বারা ৭৫ কিলোমিটার পার হওয়া সম্ভব নয়। এখানে ধনুকের উদ্দেশ্য তোপ বা ইংরেজিতে “ল্যান্ড টু ল্যান্ড মিজাইল” হতে পারে।

তাই, কোন উপসংহারে না পৌঁছালেও বিশ্বাসী বান্দা হিসাবে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে হাদিসে বর্ণিত বৃহত্তর খোরাসানের অন্তর্ভুক্ত ভূখণ্ডগুলোর  প্রতিটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সর্বোপরি সামরিক পরিস্থিতির উপর এবং অপেক্ষায় থাকবো আমরা ২০১৪ সালে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক, সামাজিক সর্বোপরি সামরিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়। 

আগমনের বছরের লক্ষণঃ

আসুন আগে আমরা ইমাম মাহদি এর আগমনের বছরের লক্ষণ, আগমনের দিনের ঘটনা, তাঁর নিকট বাইয়াত গ্রহণের ঘটনা এবং তাঁর আগমন নিশ্চিত হবার পর তাঁর বিরুদ্ধে বাহিনী প্রেরণের ঘটনা সম্বলিত হাদিসগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেই। 
ইমাম মাহদি এর আগমনের বছরের লক্ষণ সেই বছরের রমজান মাস থেকেই প্রকাশ পাবে। 
ফিরোজ দায়লামি বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 
কোন এক রমজানে আওয়াজ আসবে
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! রমজানের শুরুতে? নাকি মাঝামাঝি সময়ে? নাকি শেষ দিকে’? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,না, বরং রমজানের মাঝামাঝি সময়ে। ঠিক মধ্য রমজানের রাতে। শুক্রবার রাতে আকাশ থেকে একটি শব্দ আসবে। সেই শব্দের প্রচণ্ডতায় সত্তর হাজার মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে আর সত্তর হাজার বধির হয়ে যাবে। 
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার উম্মতের কারা সেদিন নিরাপদ থাকবে’? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন
যারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থানরত থাকবে, সিজদায় লুটিয়ে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং উচ্চ শব্দে আল্লাহু আকবর বলবে। পরে আরও একটি শব্দ আসবে। প্রথম শব্দটি হবে জিব্রাইল এর, দ্বিতীয়টি হবে শয়তানের। 


ঘটনার পরম্পরা এরূপঃ শব্দ আসবে রমজানে। ঘোরতর যুদ্ধ সংঘটিত হবে শাওয়ালে। আরবের গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে জুলকাদা মাসে। হাজী লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটবে জিলজ্জ মাসে। আর মুহাররমের শুরুটা আমার উম্মতের জন্য বিপদ। শেষটা মুক্তি। সেদিন মুসলমান যে বাহনে চড়ে মুক্তি লাভ করবে, সেটি তার কাছে এক লাখ মূল্যের বিনোদন সামগ্রীতে পরিপূর্ণ ঘরের চেয়েও বেশি উত্তম বলে বিবেচিত হবে(মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১০)

অপর এক বর্ণনায় আছে,
“... সত্তর হাজার মানুষ ভয়ে পথ হারিয়ে ফেলবে। সত্তর হাজার অন্ধ হয়ে যাবে। সত্তর হাজার বোবা হয়ে যাবে এবং সত্তর হাজার বালিকার যৌনপর্দা ফেটে যাবে(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
রমজানে আওয়াজ আসবে। জুলকাদায় গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে আর জিলহজ্জ মাসে হাজীলুণ্ঠনের ঘটনা ঘটবে(মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১০)

হযরত আমর ইবনে শুআইব এর দাদা বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
জুলকাদা মাসে বিভিন্ন গোত্রের মাঝে দ্বন্দ ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনা ঘটবে। ফলে হজ্জ পালনকারীরা লুণ্ঠিত হবে এবং মিনায় যুদ্ধ সংগঠিত হবে। সেখানে ব্যাপক প্রানহানির ঘটনা ঘটবে এবং রক্তের স্রোত বয়ে যাবে। অবশেষে তাদের নেতা (হযরত মাহদি) পালিয়ে রোকন ও মাকামে ইব্রাহিমের মধ্যখানে চলে আসবে। তাঁর অনীহা সত্ত্বেও মানুষ তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। তাঁকে বলা হবে, আপনি যদি আমাদের থেকে বাইয়াত নিতে অস্বীকার করেন, তাহলে আমরা আপনার ঘাড় উড়িয়ে দিব। বদর যুদ্ধের সংখ্যার সমসংখ্যক মানুষ তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করবে। সেদিন যারা তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে, আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবে(মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৪৯) 
---------------------------------------------
তাবরানির অপর এক বর্ণনায় আছে,
বাইয়াত গ্রহণকারী মুসলমানের সংখ্যা হবে বদরী মুজাহিদগণের সংখ্যার সমান। অর্থাৎ তিনশ তের জন(আল মুজামুল আসওসাত, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৭৬) 

মুসতাদরাকেরই আরেক বর্ণনায় আছে, হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন,
লোকেরা যখন পালিয়ে হযরত মাহদির কাছে আগমন করবে, তখন মাহদি কাবাকে জড়িয়ে ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় থাকবেন। (হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) আমি যেন তাঁর অশ্রু দেখতে পাচ্ছি। মানুষ হযরত মাহদিকে বলবে, আসুন, আমরা আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করি। হযরত মাহদি বলবেন, আফসোস! তোমরা কত প্রতিশ্রুতিই না ভঙ্গ করেছ! কত রক্তই না ঝরিয়েছ! অবশেষে অনীহা সত্ত্বেও তিনি লোকদের থেকে বাইয়াত নেবেন। (হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) ওহে মানুষ! তোমরা যখন তাঁকে পাবে, তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। কারণ, তিনি দুনিয়াতেও মাহদি’, আসমানেও মাহদি 

ইমাম যুহরি বলেছেন, হযরত মাহদির আত্মপ্রকাশের বছর দুজন ঘোষক ঘোষণা করবে। একজন আকাশ থেকে, একজন পৃথিবী থেকে। আকাশের ঘোষক ঘোষণা করবে, লোকসকল! তোমাদের নেতা অমুক ব্যক্তি। আর পৃথিবীর ঘোষক ঘোষণা করবে, ওই ঘোষণাকারী মিথ্যা বলেছে। এক পর্যায়ে পৃথিবীর ঘোষণাকারী যুদ্ধ করবে। এমনকি গাছের ডাল-পাতা রক্তে লাল হয়ে যাবে। সেদিনকার বাহিনীটি সেই বাহিনী, যাকে জাইশুল বারাজিতথা জিনওয়ালা বাহিনীবলা হয়েছে। সেদিন যারা আকাশের ঘোষণায় সাড়া দিবে, তাদের মধ্য থেকে বদরি মুজাহিদগণের সংখ্যার সমসংখ্যক লোক তথা তিনশো তেরজন মুসলমান প্রানে রক্ষা পাবে। অপর বর্ণনায় এসেছে, মারাত্মক যুদ্ধ হবে শেষ পর্যন্ত হকপন্থিদের মধ্যে শুধু বদর যুদ্ধের সেনাসংখ্যা (৩১৩) পরিমাণ লোক অবশিষ্ট থাকবে এবং তারা সেখান থেকে ফিরে এসে ইমাম মাহদির কাছে এসে বাইয়াত হয়ে যাবে।

হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
তোমাদের ধনভাণ্ডারের নিকট তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কিন্তু ধনভাণ্ডার তাদের একজনেরও হস্তগত হবে না। তারপর পূর্ব দিক থেকে কতগুলো কালো পতাকা আত্মপ্রকাশ করবে। তারা তোমাদের সাথে এমন ঘোরতর লড়াই লড়বে, যেমনটি কোন সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে লড়েনি
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেন,
তারপর আল্লাহর খলীফা মাহদির আবির্ভাব ঘটবে। তোমরা যখনই তাঁকে দেখবে, তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদি এজন্য তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যেতে হয়, তবুও যাবে। সে হবে আল্লাহর খলীফা মাহদি(সুনানে ইবনে মাজা; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০) 

এখানে খলীফা সন্তানঅর্থ সবাই বাদশা বা শাসকের সন্তান হবে। পিতার রাজত্বের দোহাই দিয়ে সবাই ক্ষমতার দাবী করবে। আর ধন ভাণ্ডারদ্বারা কাবা ঘরের নিচের প্রোথিত ধন সম্পদ হতে পারে। আবার নিছক রাজত্বও হতে পারে। কারও মতে, ফোরাত নদীর স্বর্ণ পর্বতকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু রাজত্ব হবার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, 

উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,
জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করে বিরোধ সৃষ্টি হবে। তখন মদিনার একজন লোক পালিয়ে মক্কা চলে আসবে (এই আশঙ্কায় যে, পাছে মানুষ আমাকে খলীফার পদে অধিষ্ঠিত করে কিনা)। মক্কার লোকেরা তাঁকে খুঁজে বের করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুকুন এবং মাকামে ইব্রাহিমের মাঝামাঝি স্থানে বাইয়াত গ্রহণ করবে।
বাইয়াতের খবর শুনে সিরিয়ার দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবেমক্কা মদিনার মাঝামাঝি বায়দা নামক স্থানে এসে পৌঁছানোর পর এই বাহিনীটিকে ভূগর্ভে ধসিয়ে দেওয়া হবে। বাহিনী ধ্বসের সংবাদ শুনে সিরিয়ার আবদাল’ (শ্রেষ্ঠ  মুসলমানগণ) ও ইরাকের আসাইব’ (সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ) মক্কায় এসে তাঁর (ইমাম মাহদির) নিকট বাইয়াত হবে। অতঃপর সিরিয়ার বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। সিরিয়ার দিক থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবে। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে পরাস্ত করবেন, যার ফলে তাদের উপর বিপদ নেমে আসবে। এটিই হল কালবের যুদ্ধযে ব্যক্তি কালবের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে, সে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে। তাঁরপর তিনি ধনভাণ্ডার খুলে দেবেন, মাল দৌলত বণ্টন করবেন এবং ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন। এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে সাত বছর কিংবা (বলেছেন) নয় বছর
(আল মুজামুল আওসাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস ৬৯৪০; ইবনে হিব্বান, হাদিস ৬৭৫৭; আল মুজামুল কাবীর, হাদিস ৯৩১)
ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে (কালেমার একক পতাকার ছায়াতলে জাতীয়তাবাদহীন একক ভূখণ্ড) সুপ্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তিনি পেছন দিককার শত্রুর সাথে যুদ্ধ, রোমানদের সাথে মহাযুদ্ধ, আন্তাকিয়ার যুদ্ধ, আমকের যুদ্ধ, ফোরাতের তীরে যুদ্ধ, হিন্দুস্তানের (ভারতীয় উপমহাদেশ) যুদ্ধ, কুস্তুন্তুনিয়ার ( তুরস্কের ইস্তাম্বুল) রক্তপাতহীন যুদ্ধসহ অনেক ছোটবড় যুদ্ধ তাঁর খেলাফতকালে অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী কোন লেখায় এগুলোর উপর বিষদ আলোচনা করা হবে। 

উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
কাবা ঘরে আশ্রিত ব্যক্তির (ইমাম মাহদি) বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনীর আগমন হবে। বায়দার প্রান্তরে পৌছা মাত্র বাহিনীর মধ্যভাগ ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। সম্মুখভাগ পেছন ভাগের সেনাদেরকে ডাকাডাকি করতে থাকবে। পরক্ষনেই সম্পূর্ণ বাহিনীকে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। ফলে সংবাদ বাহক একজন ছাড়া আর কেউ নিস্তার পাবে না।  (মুসলিম শরীফ) 

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন যেন করছিলেন। জাগ্রত হওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম, এমন কেন করছিলেন হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন,
খুবই আশ্চর্যের বিষয় আমার উম্মতের কিছু লোক কাবা ঘরে আশ্রিত কুরায়শী ব্যক্তিকে (ইমাম মাহদি) হত্যার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। বায়দা প্রান্তরে পৌঁছা মাত্র সবাইকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে
আমরা বললাম, ‘পথে তো অনেক মানুষের সমাগম থাকে!!রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
হ্যাঁ, দর্শক, অপারগ এবং পথিক সকলকেই একত্রে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। তবে অন্তরইচ্ছা অনুযায়ী আল্লাহপাক তাদের পুনরুত্থান করবেন(মুসলিম শরীফ) 

উপরের হাদিসগুলো থেকে প্রতিয়মান হয় যে, যে বছর ইমাম মাহদির আগমন ঘটবে, সে বছরের রমজান থেকেই আলামত প্রকাশ পেতে থাকবে। এবং সেই বছরের মধ্য রমজান হবে শুক্রবার। 

২০২৫ সাল পর্যন্ত আগামী বছরগুলোতে মধ্য রমজান শুক্রবার হবার সম্ভাবনা যে সালগুলোতে সেগুলো হল, ২০১৪ সালের ১১ ও ১২ ই জুলাই (১৪৩৫ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার), ২০১৫ সালের ২ ও ৩ জুলাই (১৪৩৬ হিজরির ১৫ ও ১৬ ই রমজান বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার), ২০১৭ সালের ৯ ও ১০ ই জুন (১৪৩৮ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার), ২০২০ সালের ৮ই মে (১৪৪১ হিজরির ১৫ ই রমজান শুক্রবার), ২০২২ সালের ১৫ ও ১৬ ই এপ্রিল (১৪৪৩ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার), ২০২৩ সালের ৬ ও ৭ ই এপ্রিল (১৪৪৪ হিজরির ১৫ ও ১৬ ই রমজান বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) এবং ২০২৫ সালের ১৪ ও ১৫ ই মার্চ (১৪৪৬ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার) 

চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে এবং ২৯ বা ৩০ দিনে রমজান মাস হবার উপর ভিত্তি করে মধ্য রমজান শুক্রবার হিসাবে সাব্যস্ত হবে। 

প্রথম শব্দটি হবে জিব্রাইল এর, দ্বিতীয়টি হবে শয়তানেরদ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, প্রথম শব্দটি আকাশ থেকে আসবে আল্লাহর নির্দেশে। কিন্তু যেহেতু এই শব্দের প্রভাব দুনিয়ার সতর্ক মুমিনদের চোখ খুলে দিবে এবং তাই কাফিররা প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় এমন বিকট কোন শব্দ ঘটাবে, যাকে শয়তানের শব্দআখ্যা দেওয়া হয়েছে। এবং এই শব্দকে একটি প্রযুক্তিগত দুর্ঘটনা বলে দাজ্জালি মিডিয়াতে এমনভাবে রং লাগিয়ে প্রকাশ করা হবে, যাতে দুনিয়ার সবাই স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় এবং অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানরা সহজেই পথ ভ্রষ্ট হয়।  

জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করে বিরোধ সৃষ্টি’, ‘তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে এবং এসময় ইমাম মাহদির মদিনা থেকে মক্কায় চলে আসাএর দ্বারা উদ্দেশ্য হয় যে, মৃত্যুবরণকারী খলীফা কোন এক সৌদি শাসক হবেন, যার মৃত্যুর পর তাঁর স্থালাভিসিক্তি নিয়ে মতবিরোধ ঘটবে। বর্তমানে সৌদি রাজ পরিবারের কাছে রাজত্বের পাশাপাশি মক্কা - মদিনার দায়িত্বপ্রাপ্তি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, সৌদি বাদশারা তাদের নামের সাথে তাদের মক্কা মদিনার সংশ্লিষ্টতাও লিখে থাকেন। যেমন বর্তমান বাদশা তাঁর নাম সরকারীভাবে এভাবে লিখেনঃ King Abdullah Bin Abdul Aziz al Saud, Kingdom of Saudi Arabia & custodian of two holy mosques. 

বর্তমান বাদশার বয়স ৮৯ বছর। সৌদি রাজ পরিবারের ব্যাপারে সেখানকার সাধারণ জনগণের অসন্তোষ, তাঁর ভবিষ্যৎ মৃত্যু এবং মধ্য প্রাচ্যের বর্তমান অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা ষড়যন্ত্রও পিছিয়ে নাই। গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছাপে যার শিরোনাম ‘How 5 countries in middle east could become 14’সেখানে তারা বেছে নিয়েছে সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সৌদি আরব। (এর ভিতরে ৩ টি ভূখণ্ডের সংশ্লিষ্টতা আছে ইমাম মাহদির আগমনের দিন, আমরা হাদিস থেকে জেনেছি, সিরিয়ার ‘আবদাল’ বা শ্রেষ্ঠ  মুসলমানগণ ও ইরাকের ‘আসাইব’ বা সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ মক্কায় এসে ইমাম মাহদির নিকট বাইয়াত হবে)। আর সৌদি আরবকে ভাঙ্গার সম্ভাব্য কারণ দেখিয়েছেঃ
‘Saudi Arabia faces its own (suppressed) internal divisions that could surface as power shifts to the next generation of princes. The kingdom’s unity is further threatened by tribal differences, the Sunni-Shiite divide and economic challenges’.

হাদিসেও এসেছে গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে জুলকাদা মাসেআর সব মিলিয়ে যদি সত্যিই পশ্চিমারা অদূর ভবিষ্যতে এর সুযোগ নিতে চায়, স্বভাবতই সবচেয়ে বড় যেই বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে তা হলঃ মক্কা - মদিনার দায়িত্বপ্রাপ্তিবা custodian of two holy mosques.
 
হাদিসে উল্লেখ আছে, ‘বাইয়াতের খবর শুনে সিরিয়ার দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবেএর অর্থ হল ইসলামের শত্রুরা হযরত মাহদির অপেক্ষায় থাকবে এবং গোয়েন্দা মারফত হারাম শরীফের খবর নিতে থাকবে। হারাম শরীফের সিরিয়ার দিক থেকে  বর্তমান সিরিয়া ব্যতীত যে ভূখণ্ডটি আছে তা হল জর্ডান (রাসুল সা. এর সময়ে এটি তৎকালীন শাম অর্থাৎ বৃহত্তর সিরিয়ার অংশ ছিল)।
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, পুরো বাহিনীটিকে ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে এবং  “সংবাদ বাহক একজন ছাড়া আর কেউ নিস্তার পাবে নাএরূপ এক আজাবের সাক্ষীকে স্বভাবতই গায়েব/হত্যা করা হবে এবং কখনোই তা প্রকাশ করতে দেওয়া হবে না। 

হাদিসে আরও উল্লেখ আছে, “অতঃপর সিরিয়ার বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। সিরিয়ার দিক থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবেএর অর্থ হল, সে সময় বনু কালবও সিরিয়া শাসন করবে ও তারা ইসলামের বিরোধিতায় লিপ্ত থাকবে। 

সুফিয়ানি



 আল আকামা ইবনে মাসুদ বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন,

“আমি তোমাদেরকে সাতটি মারাত্মক ফিতনার ব্যাপারে সাবধান করছি যা আমার পরে আসবে, একটি ফিতনা যা মদিনা থেকে আসবে, একটি ফিতনা যা মক্কা থেকে আসবে, একটি ফিতনা ইয়েমেন থেকে আসবে, একটি ফিতনা বৃহত্তর সিরিয়া থেকে আসবে, একটি ফিতনা যা পূর্বদিক থেকে আসবে, একটি ফিতনা যা পশ্চিম দিক থেকে আসবে এবং একটি ফিতনা যা সিরিয়ার পাহাড়ি উপত্যাকা থেকে আসবে যা হল সুফিয়ানি (সিরিয়ায় বনু কাল্ব গোত্রের অত্যাচারী শাসক)”।
ইবনে মাসুদ বলেন, ‘আমাদের ভিতরে অনেকে প্রথমগুলো দেখেছি আর বাকিগুলো আমাদের পরবর্তী পজন্ম দেখবে’।(মুসতাদরাকে হাকিম, আল ফিতান)

কোন কোন হাদিসে এই শাসককে সুফিয়ানিহিসাবে অবিহিত করা হয়েছে। এর কারণ, হিসাবে হযরত আলী (রাঃ) বলেন,
সুফিয়ানি যে লোক শেষ যুগে সিরিয়াতে দখল প্রতিষ্ঠা করবে সে বংশগতভাবে খালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের বংসদ্ভুত হবে। তার সহচরদের মধ্যেও "কালব্যিয়া" বা "কাল্বগোত্রের লোক বেশি হবে। মানুষের রক্ত ঝরানো তাদের বিশেষ অভ্যাসে পরিণত হবে। যে লোকই বিরোধিতা করবে, তাকেই হত্যা করা হবে। এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে। যখন হারাম শরীফে ইমাম মেহেদী (আঃ) এর আগমনের খবর প্রকাশ পাবে তখন এই শাসক ইমাম মেহেদী (আঃ) এর বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করবে(মাজাহিরে হক জাদিদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৩)

শুরুর দিকে তারা(সুফিয়ানী) ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে, পরে যখন শক্তি ও ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়ে যাবে, তারা অত্যাচার-অবিচার ও অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে(ফয়জুল কদির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১২৮)
অর্থাৎ প্রথমে তাদেরকে মুসলমানদের মাঝে মহান নেতা বা হিরো হিসাবে উপস্থাপন করা হবে, কিন্তু পরে তাদের আসল রূপ প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। 

প্রথম বাহিনী  বায়দায় ধ্বসে যাওয়ার পর ইমাম মেহেদী মুজাহিদদের নিয়ে সিরিয়ার দিকে এগিয়ে যাবেন, সেখানে অন্য এক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করবেন এবং তাদেরকে পরাজিত করবেন। এই যুদ্ধটি কাল্ব যুদ্ধনামে হাদিসে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই বাহিনীর নেতার উপাধি সুফিয়ানি’ (বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শী)। হযরত মেহেদী (আঃ)  তারবিয়া হ্রদের কাছে এই শাসককে হত্যা করবেন(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)

মুসলিম বিশ্বের জন্য উদ্বিগ্নের বিষয় হল, ১৯৬৬ সালে সামরিক ক্যু এর মাধ্যমে সিরিয়ার ক্ষমতা দখলকারী আল আসাদ পরিবারও "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব" গোত্রের। তারা শিয়াদের যে শাখার অনুসারী অর্থাৎ নুসাইরিয়া”/ “আলাভি”/ “আলাওয়াতি রাও কালব্যিয়া" বা "কাল্ব" গোত্রের। এই আসাদদের অনুগত ও অনুসারী প্রশাসনিক ও সামরিক বাহিনীর বেশির ভাগই নুসাইরিয়া”/ “আলাভি তথা "কালব্যিয়া" বা কাল্ব" গোত্রের। ইসরাইল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠের কারণে বেশির ভাগ মুসলিমরা এই পরিবারকে হিরো মনে করে। আজ ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে তাদের আসল রূপ প্রকাশ পেয়েছে। আজ তারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআদের সাথে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত। প্রথম শাসক ছিল হাফিজ আল আসাদ, তার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় শাসক বাশার আল আসাদ। কিন্তু আরবদের বিভিন্ন পশ্চিমা দালাল মিডিয়াতে নিজের "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব" গোত্রের পরিচয়কে গোপন করে কুরাইশ বংশের পরিচয়কে বাশার আল আসাদ বার বার সামনে আনছে (হাদিসে এসেছে কালব গোত্রের কুরায়েশী ব্যক্তি) এবং রাসুল (সাঃ) এর কুরাইশ বংশের ধোঁয়া তুলে বর্তমান মুসলিম জাহানের অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের সহজেই পথ ভ্রষ্ট করছে।

এমনকি সিরিয়ার এই বনু কালব গোত্রীয় শাসক বাশার আল আসাদ গত ২১ শে আগস্ট ২০১৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে দামেস্কের আলগুতা শহরে। এই আলগুতাহাদিসের বর্ণনা হিসাবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, সিরিয়ার দামেস্কের আল গুতা" নামক স্থানটি  রাসূল (সাঃ) এর বর্ণিত "মালহামা" (মহাযুদ্ধে) একটি বড় ভূমিকা রাখবে, যেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন ইমাম মেহেদী। 

হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 
 মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে সিরিয়ার সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে 
 (সুনানে আবি দাউদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৬৯)

আলগুতা  সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। মহাযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদী এর হাতে থাকবে।

আর আসমাল মাসালিক লিয়্যাম মাহাদিয়্যা মালিকি লি কুল্লু-ইদ দুনিয়া বি ইম্রিল্লাহিল মালিককিতাবে কালদা বিন জায়েদ ২১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেনঃ
১৪০০ হিজরির সাথে আরও বিশ বা ত্রিশ বছর যোগ কর। এরপরে কোন এক সময়ে মাহদির আবির্ভাব হবে...(এটি হাদিস নয়, কিতাবটিও কোন সনামধন্য কিতাব নয়, সতর্কতার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে)

তাই বর্তমান ১৪৩৫ হিজরিতে এসে সামনের দিনগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তার উপর উপর সিরিয়াতে বনু কালব গোত্রের দ্বিতীয় শাসক (দ্বিতীয় সুফিয়ানি) এবং তার বর্তমান কার্যক্রম। 
হযরত আরতাত (রাঃ) বলেন,
দ্বিতীয় সুফিয়ানির জামানায় বিকট এক আওয়াজ আসবে। আওয়াজটি এতই বিকট হবে যে, প্রত্যেক গোত্রই মনে করবে তাদের নিকটবর্তী লোকেরা ধ্বংস হয়ে গেছে।  (আল ফিতান, ৮৫০)

তাই, কোন উপসংহারে না পৌঁছালেও বিশ্বাসী বান্দা হিসাবে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে হাদিসে বর্ণিত মুসলিম ভূখণ্ডগুলোর প্রতিটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সর্বোপরি সামরিক পরিস্থিতির উপর।

Khalid bin Ma'dan said:
The Sufyani will emerge with three staffs in his hand. Anyone whom he strikes with them will die. (Nu'aym bin Hammad)

The Sufyani is a man whose trial involves his person, his power, his speed and his fighting. One of his wonders consists of his staffs, which kill anyone he strikes with them. The hadith about the Sufyani confirms that he is a tyrant who will spread corruption and crime in the Earth immediately before the appearance of the Mahdi.

Details of the Sufyani
Name and Title
According to
Imam Qurtubi, his name will be 'Urwa bin Muhammad and his talha is 'Abu Utbah' and is given the title "Sufyani" due to his descent from Abu Sufyan.

Physical characteristics
He will be a man with a large head, a pockmarked face, and white spots in his eyes.

Family Lineage
The Sufyani will be from the progeny of
Yazid bin Mu'awiya. His mother will be from the tribe of Kalb, but he is from the progeny of Khalid bin Yazid bin Abu Sufyan.

Character
Outwardly he will appear to be pious, but in reality he will be an apostate.


Hadith relates to Sufiani

When the Ethiopians come after the Arabs they will be defeated and thrown into the lowest part of the earth. While these circumstances exist, As-Sufyani will come with three hundred and sixty riders until he reaches Damascus. After a month, he will be followed by thirty-thousand from Kalb, so he will send an army to Iraq and kill a hundred thousand in Az-Zawra. Then they will go to Kufa and pillage. When this occurs a banner will come from the east led by a man from Tamim called Shuayb, the son of Salih who will restore what is in their hands from the captured people of Kufa and he will kill them. Then, another army from As-Sufyani will go to Al Medina and pillage it for three days and thereafter proceed towards Mecca until they find themselves in a desert. Then, Allah will send Gabriel and say to him, 'Chastise them!' So he will beat them with his leg once and Allah will cause them to be swallowed up. None will remain except two men who will return to As-Sufyani to inform him of the swallowing-up of his army, but this will not scare him. Several men from the Koraysh will escape to Constantinople and As-Sufyani will send to the leader of the Romans who will return them to him and he will slit their throats together with their followers. At that time a voice will come from Heaven saying: 'O people, surely Allah prevents dictatorship, tyrants and their followers for you and gives leadership to the best of the nation of Muhammad. So join him in Mecca -- he is Al Mahdi!" Then, Hudhayfah asked: 'O Messenger of Allah, how shall we know him?' He replied: "He is a man from my children, he looks like the men from the children of Israel, upon him are two white cloaks with frayed edges. His face is like a colorful, glittering star, upon his right cheek there is a black mole and he is forty years old. Al Abdal and those looking like them will come to him from Syria. An-Nujaba will come to him from the dwellers of Egypt and groups of dwellers from the east, and those looking like them until they all gather together in Mecca and so they will pledge their allegiance to him between Al Rukn and Al Makam. Then he will direct himself towards Syria with Gabriel at his front and Michael at his middle and the dwellers of Heaven and Earth will be joyful because of him. Water will be plentiful in his country and the river will be spread and treasures found. When he reaches Syria he will slay As-Sufyani under the tree, the branches of which grow in the direction of Lake Tiberias
and he will kill Kalb. So the loser of that Day of Kalb is he who does not gain even a rein." Hudhaybah asked: 'O Messenger of Allah, praise and peace be upon him, how is it permitted to kill them when they believe in the Oneness?' The Messenger of Allah, praise and peace be upon him, replied: "O Hudhayfah, they are at that time apostates, they claim that wine is permitted and do not pray." The preceding Hadiths were narrated by Hudhayfah and are found in the references of Abu Nuaym, At-Tabarani, and Abu Amru Ad Dani.
(Narrated from Ibn Mas`ud by Nu`aym ibn Hammad in Kitab al-Fitan (1:55) and, from him, by al-Hakim in the Mustadrak (4:468-469=1990 ed. 4:515) who declared it sahih)
 
 হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন বলেন,
জাওরায় (বর্তমান বাগদাদ) যুদ্ধ হবেসাহাবাগন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, জাওরা কি? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “পূর্বদিককার একটি শহর, যেটি কয়েকটি নদীর মধ্যখানে অবস্থিত। আল্লাহর সৃষ্টিকূলের নিকৃষ্টতম সৃষ্টি ও আমার উম্মতের অত্যাচারী লোকেরা সেখানে বাস করে। তাদের উপর চার ধরনের শাস্তি চাপিয়ে দেওয়া হবে। অস্ত্রের শাস্তি (মানে যুদ্ধ), মাটিতে ধ্বসে যাওয়ার শাস্তি, পাথরের শাস্তি ও আকৃতি বিকৃত হওয়ার শাস্তি
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বললেন, “যখন সুদানিরা বের হবে এবং আরবদের বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাবে, এমনকি আরবরা বাইতুল মুকাদ্দাস কিংবা উর্দুন (বর্তমান জর্ডান) পৌঁছে যাবে, ঠিক এমন সময় সুফিয়ানি (সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রীয় শাসক) তিনশো ষাট অশ্বারোহী সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসবে। তবে কোন একটি মাস অতিবাহিত হবে না, যাতে বনু কাল্বের ত্রিশ হাজার মানুষ তার হাতে বাইয়াত করবে
সুফিয়ানি একটি বাহিনী ইরাকে প্রেরণ করবে, যার ফলে জাওরায় এক লাখ মানুষ নিহত হবে। তার অব্যাহতির পর সে দ্রুত গতিতে কুফার দিকে অগ্রসর হবে এবং কুফাকে লুণ্ঠন করবে। এমন সময় পূর্বদিক (খোরাসান) থেকে দাব্বাআত্মপ্রকাশ করবে, যাকে বনু তামিমের সুয়াইব বিন সালিহ নামক এক ব্যক্তি হাকিয়ে নিয়ে আসবে। এই লোকটি সুফিয়ানির সৈন্যদের হাত থেকে কুফার বন্দিদের ছাড়িয়ে আনবে এবং সুফিয়ানির সৈন্যদেরকে হত্যা করবে
(আসসুনানুল ওয়ারিদাতুল ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১০)
এই হাদিসে জাওরায় যুদ্ধ হবে বলা হয়েছে। জাওরাবাগদাদের অপর নাম। এই অঞ্চলটি দজলাফোরাতদুটি নদীর মধ্যখানে অবস্থিত।
হাদিসে খোরাসান থেকে একটি দাব্বাআত্মপ্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে। এর শাব্দিক অর্থ বাহন। যেটি চালাবেন বনু তামিম গোত্রের সুয়াইব বিন সালিহ নামক এক ব্যক্তি। হতে পারে, এটি খোরাসান থেকে আগত বাহিনীর একটি অংশ।
লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, এখানে হাদিসে রাসুল (সাঃ) ইরাকের যুদ্ধের পরই সিরিয়াতে বনুকাল্ব গোত্রের এক অত্যাচারী কুরায়শি শাসকের আবির্ভাবের ঘটনা উল্লেখ করেছেন।
আর ঘটনার 'ক্রম' বা ধারাবাহিকতাও তাই।
আরতাত (রাঃ) বলেন,
সুফিয়ানি কুফায় প্রবেশ করবে। তিনদিন পর্যন্ত সে দুশমনদের বন্দীদেরকে সেখানে আটকে রাখবে এবং সত্তর হাজার কুফাবাসীকে হত্যা করে ফেলবেতারপর সে আঠার দিন পর্যন্ত আঠার দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে তাদের (কুফাবাসীদের) সম্পদগুলো বণ্টন করবে। তাদের (কুফাবাসীদের) মধ্যে একদল খোরাসানে ফেরত যাবে। সুফিয়ানির সৈন্যবাহিনী আসবে এবং কুফার বিল্ডিংগুলো ধ্বংস করে সে খোরাসানবাসীদেরকে তালাশ করবে। খোরাসানে একটি দলের আবির্ভাব ঘটবে, যারা ইমাম মাহদির দিকে আহ্বান করবে। অতঃপর মাহদি ও মানসুর (একজন সেনাপতি) উভয়ে উভয়ে কুফা থেকে পলায়ন করবে। সুফিয়ানি উভয়ের তালাশে সৈন্য প্রেরণ করবে। অতঃপর যখন মাহদি ও মানসুর মক্কায় পৌঁছে যাবে, তখন সুফিয়ানির বাহিনীকে বায়দানামক স্থানে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মাহদি মক্কা থেকে বের হয়ে মদিনায় যাবেন এবং ওখানে বনু হাশেমকে মুক্ত করবেন। এমন সময় কালো পতাকাবাহী লোকেরা এসে পানির উপর অবস্থান করবেকুফায় অবস্থিত সুফিয়ানির লোকেরা কালো পতাকাবাহী দলের আগমনের কথা শুনে পলায়ন করবে। কুফার সম্মানিত লোকেরা বের হবে যাদেরকে আসহাববলা হয়ে থাকে, তাদের কাছে কিছু অস্ত্র শস্ত্রও থাকবে এবং তাদের মধ্যে বসরাবাসীদের থেকে একজন লোক থাকবে। অতঃপর কুফাবাসী সুফিয়ানির লোকদেরকে ধরে ফেলবে এবং কুফার যে সব লোক তাদের হাতে থাকবে, তাদেরকে মুক্ত করবে। পরিশেষে কালো পতাকাবাহী দল এসে মাহদির হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে

(আল ফিতানঃ ৮৫০, মুহাক্কিক আহমদ ইবনে সুয়াইব এই হাদিসটির সনদকে লাবাসা বিহাবা বর্ণনাটি গ্রহণ করা যেতে পারেবলেছেন)

মানসুরসম্পর্কে হযরত হিলাল ইবনে আমর বর্ণনা করেন, আমি হযরত আলী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

এক লোক মা-আরউন্নহর (নদীর ওপার) থেকে রওনা হবে, যার নাম হবে হারছ হাররাছ। তার বাহিনীর সম্মুখ অংশের সেনাপতির নাম হবে মানসুর, যে (খেলাফত বিষয়ে) মুহম্মদ বংশের জন্য পথ সুগম করবে বা শক্ত করবে, যেমনটি কুরাইশ আল্লাহর রাসুলকে ঠিকানা দান করেছিল। তার সাহায্য সহযোগিতা করা কিংবা তার ডাকে সাড়া দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য বলে বিবেচিত হবে

(সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং ৪২৯০)

আমু নদীর ওপারে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে ইসলামের পরিভাষায় মা-আরউন্নহরবা নদীর ওপারবলা হয়। উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,কাজিকিস্তান এর অন্তর্ভুক্ত যা কিনা বৃহত্তর খোরাসানের একটি অংশ।

মুহম্মদ বিন হানাফিয়্যা (রহঃ) বলেন,
বনু আব্বাস থেকে পতাকাবাহী দল বের হবে। অতঃপর খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহী অন্য আরেকটি দল আত্মপ্রকাশ করবে। তাদের পাগড়ীগুলো কালো বর্ণের হবে এবং জামা সাদা বর্ণের হবে। কালো পতাকাবাহী দল সুফিয়ানি (সিরিয়ার বনু কাল্ব গোত্রীয় কুরায়শি শাসক) এর সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে দেবে। শেষ পর্যন্ত তারা বাইতুল মুকাদ্দাসে এসে উপস্থিত হবে এবং তাদের নেতৃত্ব ইমাম মাহদির হাতে সোপর্দ করে দেবেতাদের কাছে সিরিয়া থেকে তিনশত লোক আসবে। এদের (খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহী) বের হওয়া এবং মাহদির হাতে নেতৃত্ব সোপর্দ করার মাঝে ৭২ মাসের (৬ বছরের) ব্যবধান থাকবে

(কিতাব আল ফিতানঃ ৮৫১, দুর্বল হাদিস)

সুফিয়ানী, বনু কালব ও বাশার আল আসাদ এর পারস্প্রিক সম্প্ররক

সিরিয়ার ইতিহাসঃ আল আসাদ পরিবার

মূলত খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০০ বছর থেকে সিরিয়ার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। ইসলাম আসার সময়, সিরিয়া মূলত ‘শাম’ নামে পরিচিত ছিল এবং এর বৃহত্তর অংশের অন্তর্ভুক্ত ছিল বর্তমান জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, প্যালেস্টাইন ও দখলদার ইসরাইল। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওমর (রাঃ) এর খেলাফতের সময় সিরিয়া রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। এরপর হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) ও হযরত আবু ওবায়দা (রাঃ) এর নেতৃত্বে একে একে পুরো বৃহত্তর সিরিয়া (শাম) ইসলামিক খেলাফতের অধীনে আসে এবং দলে দলে সেখানকার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। খুলাফায়ে রাশেদিনদের পরে  ১০৯৮ সাল পর্যন্ত জাজিরাতুল আরব ভিত্তিক উমাইয়াদ, আব্বাসিয়াসহ মিশরভিত্তিক কয়েকটি রাজতন্ত্রের অধীনে শাসিত হয়। ১০৯৮ থেকে ১১৮৯ সাল পর্যন্ত ক্রুসেড যুদ্ধের সময় বর্তমানের মূল সিরিয়াসহ বৃহত্তর সিরিয়ার বিভিন্ন অংশ জার্মান, ইংরেজ, ইতালি ও ফ্রান্সের দ্বারা শাসিত হয়। পরবর্তীতে সেলজুক, আইয়ুবি, মামলুকদের হাত ঘুরে এই ভূখণ্ড ১৫১৬ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর মূলসিরিয়াসহ বৃহত্তর সিরিয়া ব্রিটিশ ও ফ্রান্স সেনাবাহিনীর অধীনে আসে। এবং এই দুই সাম্রাজ্যবাদী জাতি তখন একটা চুক্তির মাধ্যমে এর উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে। যদিও ১৯২০ সালে হাশেমি পরিবারের ফয়সাল নামক একজন তল্পিবাহককে আমীর করে একটি কয়েকমাসের ক্ষণস্থায়ী ‘সিয়িয়ান রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু তা পরে আবার ‘ফ্রান্স ম্যান্ডেট’ এর অধীনে চলে আসে।


এমনিভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত ফ্রান্স সেনাবাহিনী এবং সিরীয় জাতিয়তাবাদে বিশ্বাসীদের মধ্যে দফায় দফায় কয়েকটি যুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং ১৯৩৬ সালে সিরীয় জাতীয়তাবাদীদের ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাধীনতা চুক্তি সম্পাদিত হয়। এবং হাসিম আল তাসিকে প্রথম রাষ্ট্রপতি করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে তা আবার ফ্রান্স সেনাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং ১৯৪৬ সালে এপ্রিল মাসে সেনা প্রত্যাহার করে প্রজাতন্ত্রী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।


১৯৪৬ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত শুধু আরব ইসরাইল যুদ্ধ (১৯৪৮) আর ঘন ঘন সামরিক অভ্যুত্থানের ইতিহাস।  এর মাঝে সুয়েজ খাল নিয়ে ১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় আরব ইসরাইল যুদ্ধের পরে সিরিয়া রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) এর সাথে মৈত্রী চুক্তি করে। এর ফলে সিরিয়া রাশিয়া থেকে সমর সরঞ্জাম এর সাথে সমাজতন্ত্রের চেতনাও আমদানী করতে সক্ষম হয়। ১৯৫৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সিরিয়া এবং মিশর ‘সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র’ এর ঘোষণা দেয় এবং ১৯৬১ সালে তা ভেঙ্গে যায়। এর মাঝে সিরিয়াতে আরব জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক সমাজতান্ত্রিক মতবাদ ‘বাথিজম’ এর উত্থান ঘটে এবং একে কেন্দ্র করেই সিরিয়ায় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হতে থাকে। ১৯৬৬ সালে সালেহ জাদিদ (হাদ্দাদিন গোত্রের), মুহাম্মদ উমরান (খাইয়্যাতিন গোত্রের) এবং হাফিজ আল আসাদ (কাল্বিয়্যা বা বনু কাল্ব গোত্রের) মিলে আরেক দফা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা হাতে নেয়। এবং আশ্চর্যজনকভাবে তিনজন অফিসারই শিয়া নুসাইরিয়া আকিদার। এরমাঝে ১৯৬৭ সালে সিরিয়া আবারও ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং গোলান মালভূমি হাতছাড়া হয়। এই বিষয়কে ভিত্তি করে  যুদ্ধকালীন সামরিক প্রধান হাফিজ আল আসাদ ও অপর সামরিক শাসক সালাহ জাদিদের সাথে মতপার্থক্য প্রকট হয়। যার ফলস্বরূপ, এক রক্তপাতহীন সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৭০ সালে হাফিজ আল আল আসাদ ক্ষমতায় আসীন হয় এবং ২০০০ সালে তার মৃত্যুর পর ৩০ বছরের শাসন শেষে তার ছেলে বাশার আল আসাদ ক্ষমতায় আসে। উল্লেখ্য, এ নুসাইরিয়া সম্প্রদায় সিরিয়ার মাত্র ১৩% শিয়ার একটি অংশ।


মূলত ১৯৭০ সালে হাফিজ আল আসাদের ক্ষমতায় আসার মাধ্যমে সিরিয়া নামক গোটা ভূখণ্ডে ইসলাম আসার পরের ইতিহাসে প্রথম কোন ব্যক্তি সিরিয়ার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হল যে কিনা আরবদের গোত্র পরিচয়ের দিক থেকে বনু কাল্ব গোত্রের এবং আকিদাগত দিক থেকে শিয়া নুয়াইরিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং জন্মগতভাবে পাহাড়ি উপত্যাকার একটি গ্রাম কারদাহা থেকে । 


আর ২০০০ সালে হাফিজ আল আসাদের মৃত্যুর পর তার ছেলে বাশার আল আসাদ সিরিয়ার ক্ষমতায় আসীন হয়। 

 ২রা ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ সালে হামা শহরে বনু কাল্ব গোত্রীয় প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তার সহোদর কর্নেল রিফাত আসাদের নেতৃত্বে সিরিয়ান সেনাবাহিনী আহলে-সুন্নাহ, বিশেষ করে ইখওয়ানুল মুসলিমিনের উপর যে আক্রমণ ও গণহত্যা পরিচালনা করে নিকট অতীতে তার কোন নজির নেই। সে গণহত্যায় গুম, গ্রেফতার ও দেশত্যাগীদের ছাড়া শুধু হত্যার শিকার-ই প্রায় ৪০-হাজার সাধারণ লোক।
বিভিন্ন দেশের সংবাদ পত্রে প্রকাশ, সিরিয়ার আসাদ সরকার বিদ্রোহ ও আন্দোলন দমনের জন্য সেনাবাহিনীকে যাবতীয় সহযোগিতা প্রদান করে। পৈশাচিক এ দমন অভিযানের বিরুদ্ধে জাতিগত প্রতিবাদ ও বহির্বিশ্বের চাপ ঠেকানোর জন্য আন্তঃ ও বহিঃ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়াসহ সংবাদ পত্রের উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। হামা শহরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী সব রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। শহর থেকে কাউকে বের হতে দেয়া হয় নি। বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ কেটে দেয়া হয়, ফলে হামলার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাতেই পুরো শহর বিভীষিকাময় অন্ধকারে পতিত হয়। বহু মসজিদ ও গির্জা ধ্বংস করা হয়, অলিতে-গলিতে হত্যাযজ্ঞ চলে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, বহু কবরস্থান গুড়িয়ে দেয়া হয়। অবশেষে স্বৈরশাসক ও তার বাহিনীর হাতে [২-২৮ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ই.] লাগাতার ২৭-দিন অব্যাহত গণহত্যা ও বাড়ি-ঘর ধ্বংসের পর হামা শহরের এক তৃতীয়াংশ নিঃশেষ হলে এ ধ্বংস যজ্ঞের সমাপ্তি ঘটে।
মক্কাতে ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের সাথে সাথে সর্বপ্রথম যেই আরব শাসকটি মাহদির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে সে হবে সিরিয়া নামক ভূখণ্ডের একজন অত্যাচারী শাসক যে কিনা হবে বনুকাল্ব গোত্রের ব্যক্তিত্ব। এতে এও বুঝা যায় যে, ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের আগেই সে সিরিয়াতে শাসকরূপে আসীন থাকবে যার কারণে, ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের সাথে সাথেই সে ইমাম মাহদির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে যাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘কাল্বের যুদ্ধ’ নামে আখ্যায়িত করেছেন।
কোন কোন হাদিসে এই শাসককে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে অবিহিত করা হয়েছে। এর কারণ, হিসাবে হযরত আলী (রাঃ) বলেন,
“সুফিয়ানি – যে লোক শেষ যুগে সিরিয়াতে দখল প্রতিষ্ঠা করবে সে বংশগতভাবে খালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের বংসদ্ভুত হবে। তার সহচরদের মধ্যেও "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব” গোত্রের লোক বেশি হবে। দামেস্কের দিক থেকে তার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তার মাথা বড় হবে এবং মুখে শ্বেত রোগের দাগ থাকবে। এক চোখে একটি সাদা দাগ থাকবে। মানুষের রক্ত ঝরানো তাদের বিশেষ অভ্যাসে পরিণত হবে। যে লোকই বিরোধিতা করবে, তাকেই হত্যা করা হবে। এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে। যখন হারাম শরীফে ইমাম মেহেদী এর আগমনের খবর প্রকাশ পাবে তখন এই শাসক ইমাম মেহেদী এর বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করবে”।(মাজাহিরে হক জাদিদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৩)
২০০০ সালে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত বনু কাল্ব গোত্রের অপর শাসক বাশার আল আসাদের জন্ম দামেস্কে।
২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে নুসাইরিয়াদের অবস্থান আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ এর বিরুদ্ধে এতই নিষ্ঠুর যে, “এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে” – হাদিসের এই লাইনটিকে পর্যন্ত তারা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত করছে। আর মহান আল্লাহ আজ প্রযুক্তির মাধ্যমে তা সারা বিশ্বে জানিয়ে দিয়েছে।
ব্রিটিশ ডাঃ ডেভিড নট, যিনি কিনা সিরিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঁচ সপ্তাহ ধরে সেচ্ছায় চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন, তার বরাত দিয়ে গত অক্টোবর ২০১৩ সালে সিএনএন, ডেইলি মেইল, ডেইলি টেলিগ্রাফসহ বহু আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এই খবর প্রচারিত হয় যে, আসাদের স্নাইপাররা গর্ভবতী মহিলাদের পেটকে লক্ষ্য করে গুলি করে গর্ভস্থিত সন্তানদের হত্যা করছে। গুলিবিদ্ধ গর্ভস্থিত শিশুর এক্স রে রিপোর্টসহ এই খবর দেখতে ইন্টারনেটে  “Is this the most sickening image of the war in Syria so far? Snipers 'target unborn children in chilling competition to win cigarettes” লিখে সার্চ দিলে http://www.dailymail.co.uk এর একটি নিউজ পাওয়া যেতে পারে।
এমনকি সিরিয়ার এই বনু কালব গোত্রীয় শাসক বাশার আল আসাদ গত ২১ শে আগস্ট ২০১৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে দামেস্কের আলগুতা শহরে। এই ‘আলগুতা’ হাদিসের বর্ণনা হিসাবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, সিরিয়ার দামেস্কের “আল গুতা" নামক স্থানটি  রাসূল (সাঃ) এর বর্ণিত "মালহামা" (মহাযুদ্ধে) একটি বড় ভূমিকা রাখবে, যেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন ইমাম মেহেদী। 
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 “মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে সিরিয়ার সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে”। (সুনানে আবি দাউদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৬৯)
আলগুতা  সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। মহাযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদী এর হাতে থাকবে।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“সুফিয়ানির আবির্ভাব হবে দামেস্কের দিক থেকে। তার সহচরদের মধ্যেও "কালব্যিয়া" বা "কাল্ব” গোত্রের লোক বেশি হবে। সে মানুষদেরকে এমনভাবে হত্যা করবে যে এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে। ফলে বনু কায়েস গোত্রের লোক তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে তাদের সবাইকে হত্যা করে ফেলবে। আমার ঘরের (আহলে বাইতের) এক ব্যক্তি (ইমাম মাহদি) মক্কাতে আসবে এবং এ খবর তার কাছে পৌঁছবে। তখন সে (সুফিয়ানি) একটি সৈন্য বাহিনী পাঠাবে এবং পরাজিত হবে। এরপর সে আরেকটি বাহিনী পাঠাবে এবং মরুভূমিতে ভূমিধ্বসে ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধুমাত্র একজন লোক বেঁচে থাকবে যে কিনা (ভূমিধ্বসের) এই সংবাদ পৌঁছে দিবে”। (ইবনে হিব্বান, তিরমিজি, আবু ইয়েলী, তাবরানী, আল ফিতান, মুসতাদরাকে হাকিম)
দামেস্কে জন্মগ্রহণকারী  এই বাশার আল আসাদদের অনুগত ও অনুসারী প্রশাসনিক ও সামরিক বাহিনীর বেশির ভাগই “নুসাইরিয়া”/ “আলাভি” তথা “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। আজ তারা “আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআ”দের সাথে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত। উল্লেখ্য, হাফিজ আল আসাদের মুখে শ্বেত দাগ ছিল।
২০১১ তে যুদ্ধ শুরু হবার পর বনু কাল্ব গোত্রের বিরুদ্ধে বনু কায়েসের অবস্থান বের করতে না পারলেও  পিছনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, উমাইয়াদ খেলাফতের সময় বনু কাল্ব গোত্র ২য় মারওয়ানের বিরোধিতা করলে বনু কায়েস গোত্রই সর্বপ্রথম  বনু কাল্ব গোত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন খুযায়ী (রাঃ) দাঁড়িয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমরা এই সুফিয়ানিকে কিভাবে চিনব?’
উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন,
“তার গাঁয়ে দুটি কাতওয়ানির চাদর থাকবে। তার চেহারার রং ঝলমলে তারকার মতো হবে। ডান গালে তিলক থাকবে। আর বয়স চল্লিশের কম হবে”।(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১১০)
ঝলমলে চেহারার অধিকারী বাশার আল আসাদ ৩৫ বছর বয়সে সিরিয়ার শাসনভার গ্রহণ করে। দুটি কাতওয়আনির চাদর বলতে যদি দুটি জাতিকে সাহায্যকারী হিসাবে বোঝানো হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা বর্তমানে ইরান (পারস্য) ও রাশিয়া (পেছনের দিকের শত্রু)-কে দেখছি। আর হাদিসেও ইমাম মাহদির আগমনের পরে যুদ্ধের সিরিয়ালে কাল্ব যুদ্ধের পরে এই দুই জাতির সাথে যুদ্ধের ইঙ্গিত এসেছে। এই দুই জাতির সাথে যুদ্ধের পরেই মহাযুদ্ধের বর্ণনা এসেছে। 

ইমাম মাহদী (আঃ) এর পৃথিবীতে আগমনের সময় হয়ে গেছে।

ইমাম মাহদী (আঃ) এর পৃথিবীতে আগমনের সময় হয়ে গেছে।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের ১১ তম সদস্য ইমাম হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র পুত্র হিসেবে (আজ হতে ১১৮১ চন্দ্রবছর আগে) তাঁর জন্ম হয়েছিল ২২৫ হিজরিতে ইরাকের (বর্তমান রাজধানী বাগদাদের উত্তরে) পবিত্র সামেরা শহরে।

তাঁর মায়ের নাম ছিল নার্গিস এবং তিনি মহান আল্লাহর আদেশে এক পর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যান। তাঁর অদৃশ্য থাকার সময়ও দুই ভাগে বিভক্ত। স্বল্পকালীন সময়ের জন্য অদৃশ্য হওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদে অদৃশ্য থাকা। দীর্ঘ মেয়াদে অদৃশ্য থাকার পর উপযুক্ত সময়ে তিনি আবার আবির্ভূত হবেন (যেভাবে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আবারও ফিরে আসবেন ঈসা-আ.) এবং সব ধরনের জুলুম ও বৈষম্যের অবসান ঘাটিয়ে বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার ও ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। অতীত যুগের সুন্নি মনীষী ও আলেম সমাজের অনেকেই এই মহান ইমামের জন্ম গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন।

ইমাম মাহদির (আ.) আবির্ভাবের যুগে পৃথিবী, বিশেষ করে যে অঞ্চলে ইমাম মাহদি (আ.) আবির্ভূত হবেন সেই অঞ্চল, যেমন ইয়েমেন, হিজায, ইরান, ইরাক, শাম (সিরিয়া, লেবানন ও জর্দান), ফিলিস্তিন, মিশর ও মাগরিবের (মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও লিবিয়া) যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তা ছোট-বড় অনেক ঘটনা এবং বহু ব্যক্তি ও স্থানের নামকে শামিল করে।

বেশ কিছু সংখ্যক রেওয়ায়েত ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরপরই পবিত্র মক্কা নগরী থেকে হযরত ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাবের বিপ্লব ও আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে।

কিন্তু আঞ্চলিক পর্যায়ে ইমাম মাহদি (আ.)-এর সমর্থক দু’টি সরকার ও প্রশাসন ইরান আর ইয়েমেনে প্রতিষ্ঠিত হবে। মাহদি (আ.)-এর ইরানী সঙ্গী-সাথীরা তাঁর আবির্ভাবের বেশ কিছুকাল আগে নিজেদের একটি সরকার গঠন করে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। অবশেষে তারা ঐ যুদ্ধে বিজয়ী হবে।

ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাবের কিছুকাল আগে ইরানীদের মধ্যে দু’ব্যক্তি (একজন খোরাসানী সাইয়্যেদ তথা বিশ্বনবী-(সা.)’র বংশধর যিনি হবেন রাজনৈতিক নেতা এবং অপরজন শুআইব ইবনে সালিহ্ যিনি হবেন সামরিক নেতা) আবির্ভূত হবেন এবং এ দু’ব্যক্তির নেতৃত্বে ইরানী জাতি তাঁর আবির্ভাবের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কিন্তু ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাবের কয়েক মাস আগে তাঁর ইয়েমেনী সঙ্গী-সাথিগণের বিপ্লব ও অভ্যুত্থান বিজয় লাভ করবে এবং তারা বাহ্যত হিজাযে যে রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হবে তা পূরণ করার জন্য তাঁকে সাহায্য করবে।

হিজাযের এ রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ার কারণ হচ্ছে হিজাযের কোন এক বংশের এক নির্বোধ ব্যক্তি যার নাম হলো আবদুল্লাহ্, সে দেশের সর্বশেষ বাদশাহ্ হিসেবে নিহত হবে এবং তার স্থলাভিষিক্ত কে হবে- এ বিষয়কে কেন্দ্র করে এমন এক মতবিরোধের সৃষ্টি হবে যা ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাব পর্যন্ত চলতে থাকবে।

“যখন আবদুল্লাহর মৃত্যু হবে, তখন জনগণ কোন্ ব্যক্তি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবে- এ ব্যাপারে কোন ঐকমত্যে পৌঁছতে পারবে না। আর এ অবস্থা ‘যুগের অধিপতি’র (ইমাম মাহদির) আবির্ভাব পর্যন্ত চলতে থাকবে। বহু বছর রাজত্ব করার দিন শেষ হয়ে কয়েক মাস বা কয়েক দিনের রাজত্ব করার অর্থাৎ ক্ষণস্থায়ী শাসনের পালা চলে আসবে।”

আবু বসীর বলেন : “আমি জিজ্ঞাসা করলাম : এ অবস্থা কি দীর্ঘকাল স্থায়ী হবে? তিনি বললেন : কখনই না। বাদশাহ (আবদুল্লাহর) হত্যাকাণ্ডের পরে এ দ্বন্দ্ব ও সংঘাত হিজাযের গোত্রগুলোর মধ্যকার সংঘাত ও কলহে পর্যবসিত হবে।”

“(ইমাম মাহদির) আবির্ভাবের নিদর্শনগুলোর অন্যতম হচ্ছে ঐ ঘটনা যা দু’হারামের (মক্কা ও মদিনা) মাঝখানে সংঘটিত হবে। আমি বললাম : কোন্ ঘটনা ঘটবে? তিনি বললেন : দু’হারামের মাঝে গোত্রীয় গোঁড়ামির উদ্ভব হবে এবং অমুকের বংশধরদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বিরোধী গোত্রের ১৫ জন নেতা ও ব্যক্তিত্বকে অথবা তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে।”

এ সময়ই ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাবের নিদর্শনগুলো স্পষ্ট হয়ে যাবে এবং সম্ভবত এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় নিদর্শন হচ্ছে আসমানি আহ্বান বা ধ্বনি যা তাঁর নামে ২৩ রমজানে শোনা যাবে। বিভিন্ন ইসলামী বর্ণনা ও হাদিস অনুযায়ী দিনটি হবে শুক্রবার।

তাঁর শত্রুরা তাঁর আবির্ভাবের ব্যাপারে খুব ভীত হয়ে পড়বে এবং এ কারণে তারা তাঁকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করবে। জনগণের মাঝে ছড়িয়ে যাবে যে, তিনি মদিনায় অবস্থান করছেন।

বিদেশী সামরিক বাহিনী অথবা হিজায সরকার সে দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনয়ন এবং সরকারের সাথে গোত্রসমূহের দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন করার জন্য সিরিয়াস্থ সুফিয়ানী সেনাবাহিনীর সাহায্য চাইবে।(হাদিস বা ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী সুফিয়ানী বাহিনীর নেতা সুফিয়ানী হবে মুয়াবিয়ার বংশধর)
এ সেনাবাহিনী মদিনায় প্রবেশ করে হাশেমী বংশীয় যাকে পাবে তাকেই গ্রেফতার করবে। তাদের অনেককে এবং তাদের অনুসারীদেরকে হত্যা করবে এবং অবশিষ্টদেরকে জেলখানায় বন্দী করে রাখবে।

“সুফিয়ানী তার একদল সৈন্যকে মদিনায় প্রেরণ করবে এবং তারা সেখানে এক ব্যক্তিকে হত্যা করবে। মাহদি ও মানসূর সেখান থেকে পলায়ন করবেন। তারা মহানবীর (সা.) সকল বংশধরকে গ্রেফতার করবে। আর এর ফলে কোন ব্যক্তিই মুক্ত থাকবে না। সুফিয়ানী বাহিনী ঐ দু’ব্যক্তিকে ধরার জন্য মদিনা নগরীর বাইরে যাবে এবং ইমাম মাহদি (ফিরআউনের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যাপারে) হযরত মুসা (আ.)-এর মতো ভীত ও চিন্তিত অবস্থায় সেখান থেকে বের হয়ে মক্কাভিমুখে চলে যাবেন।


ইমাম মাহদীর আবির্ভাবঃ 
হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

তোমাদের ধনভাণ্ডারের নিকট তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কিন্তু ধনভাণ্ডার তাদের একজনেরও হস্তগত হবে না। তারপর পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে কতগুলো কালো পতাকা আত্মপ্রকাশ করবে। তারা তোমাদের সাথে এমন ঘোরতর লড়াই লড়বে, যেমনটি কোন সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে লড়েনি
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেন,
তারপর আল্লাহর খলীফা মাহদির আবির্ভাব ঘটবেতোমরা যখনই তাঁকে দেখবে, তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদি এজন্য তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যেতে হয়, তবুও যাবে। সে হবে আল্লাহর খলীফা মাহদি(সুনানে ইবনে মাজা; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, 
কালো পতাকা পূর্ব দিক থেকে আর হলুদ পতাকা পশ্চিম দিক থেকে আগমন করবে। সিরিয়ার কেন্দ্রভূমি তথা দামেস্কে উভয় পক্ষের মোকাবিলা হবে (আল ফিতান, নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ) 
উমর বিন মুররাহ আল জামালী (রাঃ) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 
নিশ্চই খোরাসান থেকে একদল কালো পতাকাবাহী লোকের আবির্ভাব ঘটবে এবং তাঁদের একদল তাঁদের ঘোড়াগুলো দড়ির সাহায্যে বাইতাল লাহ্যিয়া (গাজা, ফিলিস্তিন) এবং হারাস্তার (দামেস্ক, সিরিয়া) মধ্যবর্তী স্থানে জাইতুন গাছের সাথে বাধবে আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সেখানে কি কোন জাইতুন গাছ আছে’? তিনি বলেনযদি সেখানে জাইতুন গাছ নাও থাকে তাহলে

ইমাম মাহদীর আগমনের সময় সম্পর্কে তথ্যঃ 

 যেহেতু “রিসালাত আল খুরুজ আল মাহাদি” কিতাবের ১০৮ পৃষ্ঠায় এসেছে,
“১৪০০ হিজরির পরে মানুষ ইমাম মাহদিকে ঘিরে একত্রিত হবে” (হাদিস নয়, দূর্বল বর্ননা)
আর “আসমাল মাসালিক লিয়্যাম মাহাদিয়্যা মালিকি লি কুল্লু-ইদ দুনিয়া বি ইম্রিল্লাহিল মালিক” কিতাবে কালদা বিন জায়েদ ২১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেনঃ
“১৪০০ হিজরির সাথে আরও বিশ বা ত্রিশ বছর যোগ কর। এরপরে কোন এক সময়ে মাহদির আবির্ভাব হবে...”। (এটি হাদিস নয়, কিতাবটিও কোন সনামধন্য কিতাব নয়, সতর্কতার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে)
তাই বর্তমান ১৪৩৫ হিজরিতে এসে সামনের দিনগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তার উপর উপর সিরিয়াতে বনু কালব গোত্রের শাসক এবং তার বর্তমান কার্যক্রম।





















Previous Post
Next Post
Related Posts

0 মন্তব্য(গুলি):

for post your Comment plz select this option from the list
Comment as: Anonymous