অনেকে মনে করেন, সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহাজাদা আজমের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছিল এ এলাকার। শাহজাদা আজম বাংলার সুবাদার ছিলেন ১৬৭৮ থেকে ৭৯ সাল পর্যন্ত। তিনি তখন লালবাগ দুর্গের কাজ শুরু করেছিলেন। তার কর্মচারীরা বাস করতেন এই এলাকায়। তখন সেই এলাকাটি আজমপুরা নাম পরিচিত ছিল।
ঢাকা শহরের অন্যতম বৃহত্তম কবরস্থানঅবস্থিত। এছাড়া বিংশ শতকের ১৯৫০ এর দশকে এখানে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য অনেক গুলো আবাসস্থল নির্মাণ করা হয়, যা আজিমপুর কলোনী নামে পরিচিত।
নামকরণ
আজিমপুর এর নামকরণ নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকে মনে করেন, সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহাজাদা আজমের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছিল এ এলাকার। শাহজাদা আজম বাংলার সুবাদার ছিলেন ১৬৭৮ থেকে ৭৯ সাল পর্যন্ত। তিনি তখন লালবাগ দুর্গের কাজ শুরু করেছিলেন। তার কর্মচারীরা বাস করতেন এই এলাকায়। তখন সেই এলাকাটি আজমপুরা নাম পরিচিত ছিল। অনেকে আবার মনে করেন, সম্রাট আওরঙ্গজেবের নাতি শাহজাদা আজিমুশশানের নামে নামকরণ করা হয়েছিল আজিমপুর। আজিমুশশান বাংলার সুবাদার ছিলেন ১৬৯৭ থেকে ১৭০৩ সাল পর্যন্ত। তার আমলে এখানে আমলাদের জন্য আবসস্থল নির্মাণ শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়
ইতিহাস
ঢাকার পুরানো এলাকাগুলোর মধ্যে আজিমপুর একটি। বিশ শতকের গোড়ার দিকে আজিমপুর বিরান অঞ্চল ছিল। ধরে নেয়া হয়, আজিমপুর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল মোঘল আমলে। পরবর্তীতে ২০ শতকের পঞ্চাশের দশকে সরকারী কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা হিসেবে আজিমপুরকে গড়ে তোলা হয়। তখন সেই আবাসিক অংশটুকু আজিমপুর কলোনী নামে পরিচিতি লাভ করে। তবে আজিমপুর এলাকাটি আয়তনে অনেক বড়। কেবল পূর্বাংশের বিরাট এলাকাজুড়ে আজিমপুর কলোনী অবস্থিত।
আজিমপুর মসজিদ ঢাকা শহরের আজিমপুর কবরস্থানের পাশে অবস্থিত। মসজিদটিতে এতবার সংস্কার ও পরিবর্তন করা হয়েছে যে, বাইরে থেকে এখন এটিকে একটি আধুনিক ইমারত বলে মনে হয়। একটি ফারসি শিলালিপি এখনও প্রধান প্রবেশপথের উপর বিদ্যমান রয়েছে। এর বর্ণনা অনুযায়ী এটি জনৈক ফয়জুল্লাহ কর্তৃক ১৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছে।
এটি একটি দ্বিতল ইমারত। নিচের তলাটি ভল্টেড প্লাটফর্ম। উপরতলায় প্রধান মসজিদ ভবন ও মসজিদের উত্তরদিকে একটি ইমারত ছিল। উত্তরের এ ইমারত বর্তমানে অনুপস্থিত। উত্তর-পূর্ব কোণে একটি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসার পথ। ভল্টেড প্লাটফর্মটি ভূমি থেকে প্রায় ৪.২৭ মি. উঁচু, এটি অসম আয়তাকার উত্তর থেকে দক্ষিণে এর পরিমাপ ২২.৮৬ মি. এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৬.৭৬ মি.। ভিতের তলদেশে উত্তরদিকে ও পূর্বদিকে ধারাবাহিকভাবে নির্মিত সারিবদ্ধ কক্ষ রয়েছে, সবগুলিই চওড়া খিলানযুক্ত প্রবেশপথের মাধ্যমে বাইরের দিকে উন্মুক্ত।
সার্বিকভাবে আজিমপুর মসজিদ কম্প্লেক্সটির প্রায় ১.৫ কিমি দূরে অবস্থিত খান মুহম্মদ মৃধার মসজিদের সাথে প্রায় হুবহু মিল রয়েছে। প্লাটফর্মের উপরে মসজিদের উত্তরদিকের ইমারতটি বর্তমানে অনুপস্থিত। খুব সম্ভব এ ইমারতটি আদিতে ‘হুজরার’ উদ্দেশ্যে নয় বরং মৃধার মসজিদের ন্যায় মাদ্রাসা ধরনের কোনো কিছুর উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিল। নিচের ভল্টেড কক্ষগুলির দেয়ালে বিদ্যমান বইয়ের তাকগুলি এ ধারণাকে জোরালো করে।
এক্ষেত্রে এ ভল্টেড কক্ষগুলি অবশ্যই মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের ‘ডরমেটরি’ হিসেবে ব্যবহূত হতো বলে মনে হয়।
মসজিদটি পুরোপুরিভাবে প্লাটফর্মের উপরের উত্তর-পশ্চিমাংশ দখল করে রয়েছে। এটির পরিকল্পনা আয়তাকার, উত্তর-দক্ষিণে এর পরিমাপ ১১.৫৮ মি এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৭.৩২ মি.।
দেয়ালের মধ্যে তৈরি মোট চারটি অষ্টভুজাকৃতির পার্শ্ববুরুজ, আদিতে এগুলি অবশ্যই মুগল রীতিতে প্যারাপেটকে অতিক্রম করে উপরে উঠে গিয়েছিল। কিন্তু মসজিদের পার্শ্ববুরুজের উপরিভাগ মূল মসজিদের পাশের বহুতল সম্প্রসারণ নিমার্ণকাজের সময় অপসারণ করা হয়েছে।
পাঁচটি খিলান দ্বারা নির্মিত প্রবেশ পথের মধ্য দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা যায়; পূর্বদিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণদিকের প্রতিটিতে একটি করে। পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশ পথের প্রতিটি একটি অর্ধগম্বুজের নিচে স্থাপিত এবং পরপর দুটি খিলান ধারণ করে আছে; বাইরেরটি বড় এবং চওড়া ও বহুখাঁজ-নকশা সম্বলিত। আর ভেতরের ছোট খিলানটি সাধারণ চতুর্কেন্দ্রিক ধরনের।
কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি পার্শ্ববর্তী প্রবেশপথের তুলনায় বড় এবং উভয়পাশে অর্ধঅষ্টভুজাকৃতির সরু বুরুজ দ্বারা সীমাবদ্ধ একটি আয়তাকার অভিক্ষেপের মধ্যে এটি নির্মিত হয়েছে। পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশ পথ বরাবর অভ্যন্তরে কিবলা দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি বড় এবং অর্ধঅষ্টভুজাকার, কিন্তু পাশের প্রতিটি সাধারণ আয়তাকার কুলুঙ্গি।
মসজিদের অভ্যন্তরভাগ তিনটি ‘বে’তে বিভক্ত মাঝেরটি বর্গাকৃতির এবং পাশের প্রতিটি আয়তাকৃতির। পাশের ‘বে’গুলি পুরোপুরিভাবে অর্ধগম্বুজ ভল্ট দ্বারা আচ্ছাদিত, কিন্তু মাঝের র্বগাকার ‘বে’টি একটি বড় অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত, যার উপরে পদ্ম ও কলস চূড়া শোভা পাচ্ছে।
প্রধান গম্বুজটিকে সরাসরি একটি অষ্টভুজাকার পিপার উপর বসানো হয়েছে যা পার্শ্ববর্তী অর্ধগম্বুজাকৃতির ভল্টগুলি এবং কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথ ও মিহরাবের উপর নির্মিত নিরেট খিলানের উপর ভর করে আছে। গম্বুজের বিবর্তনের পর্যায়ে (Phase of transition) উপরস্থ কোণগুলিতে তৈরি ছোট অর্ধগম্বুজাকৃতির স্কুইঞ্চ ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের কার্নিশ ও প্যারাপেট অনুভূমিকভাবে তৈরি।
অষ্টভুজাকৃতির পার্শ্ববুরুজ ও অভিক্ষিপ্ত সম্মুখ দেয়ালের উভয়পাশের ক্ষুদ্রবুরুজগুলিতে চমৎকার কলসাকৃতির ভিত রয়েছে। গম্বুজের অভ্যন্তরভাগের চূড়ার অংশে একটি বড় আকারের মেডালিয়ান খচিত, যা পরবর্তী সময়ে একটি রোজেট দ্বারা অলঙ্কৃত হয়েছে।
প্যারাপেট ও গম্বুজের অষ্টভুজাকার পিপার বাইরের দিক নিরেট মেরলোনের সারি দ্বারা অলঙ্কৃত। মসজিদের পূর্বদিকের সম্মুখভাগে প্যানেলগুলি এখন আর দেখা যায় না। প্রধান মিহরাবটি কিছুটা অভিক্ষিপ্ত আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে স্থাপিত হয়েছে এবং এর উপরিভাগ বদ্ধ মেরলোনের একটি ফ্রিজ দ্বারা পরিশোভিত।
পরিকল্পনা ও অন্যান্য স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে আজিমপুর মসজিদটি মৃধার মসজিদ এবং ঢাকা শহরে বিদ্যমান এ ধরনের কয়েকটি নিদর্শনের সাথে তুলনীয়। এ শ্রেণির ইমারতকে ‘আবাসিক মাদ্রাসা মসজিদ’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
আদি মসজিদের ছাদের কাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ মন্তব্য করা যায়। একটি একক গম্বুজ এবং এর উভয় পার্শ্বস্থ অর্ধগম্বুজ ভল্ট সহযোগে নির্মিত এ ধরনের নিদর্শনসমূহের মধ্যে বাংলার স্থাপত্যে এখন পর্যন্ত জানা এটিই সর্বশেষ উদাহরণ। এরূপ ছাদের বিন্যাস সতেরো শতকের শেষভাগ এবং আঠারো শতকের শুরুর দিকে উত্তর-পূর্ব বাংলার নিদর্শনসমূহে বিকাশ লাভ করে। বর্তমান উদাহরণটি এ ধরনের নিদর্শনগুলির মধ্যে সবচেয়ে পরিশুদ্ধ ও বিকশিত নিদর্শন।
ইতঃপূর্বে নির্মিত অনুরূপ উদাহরণ, যেমন সাতক্ষীরার আতারৌ মসজিদ (সতেরো শতকের শেষভাগ) এবং নারায়ণগঞ্জের মোগরাপাড়া মসজিদ (১৭০০-০১ খ্রি.)। এ মসজিদদ্বয়ে পার্শ্ববর্তী অর্ধগম্বুজগুলি কেন্দ্রীয় গম্বুজের তুলনায় খুব ছোট আকৃতির এবং শুধু মসজিদের ভেতর থেকেই এগুলিকে দেখা যায়। কিন্তু আলোচ্য উদাহরণটিতে এ ভল্টগুলিকে এত বড় করে নির্মাণ করা হয়েছে যে,
এগুলি ছাদের সার্বিক পরিকল্পনার একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। অধিকন্তু এ ভল্টগুলি বাইরে থেকে আলাদাভাবেই দৃশ্যমান। এটা অসম্ভব নয় যে, এ প্রভাবটি অটোম্যান স্থাপত্য থেকে এসেছে; হতে পারে মুগল আমলে ঢাকায় বসবাসকারী আরমেনীয়দের মাধ্যমে, কিংবা ভাগ্যান্বেষী অটোম্যান প্রবাসী শিল্পীদের মাধ্যমে, যারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির বণিকদের সঙ্গে মুগল আমলে ঢাকায় এসেছিল। অটোম্যান মসজিদের মধ্যে এ উন্নত ছাদ পরিকল্পনা ইস্তাম্বুলের বায়েজীদের মসজিদ (১৫০১-০৫ খ্রি.) এবং শাহজাদা মসজিদে (১৫৪৩-৪৮ খ্রি.) বিদ্যমান। এগুলিতে প্রধান গম্বুজের পাশে দুটি বা চারটি অর্ধগম্বুজ রয়েছে।
আজিমপুর গোরস্থান
আজিমপুর গোরস্থান বাংলাদেশের ঢাকা শহরে আজিমপুরে অবস্থিত একটি মুসলমান সমাধিস্থল। একে আজিমপুর কবরস্থান হিসেবেও প্রায়শ উল্লেখ করা হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে ঢাকা শহরের পত্তনের সমসময়ে এই গোরস্থানের সূচনা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।
বর্ণনা
২৭ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে আজিমপুর গোরস্থান। এই গোরস্থানের দুটি অংশ রয়েছে যথা নতুন গোরস্থান ও আরেকটি পুরাতন গোরস্থান। পুরাতন গোরস্থানটি নতুন গোরস্থানের তুলনায় বেশ ছোট।
সুবিধাদি
আজিমপুর গোরস্থান লাশ দাফন করা ছাড়াও লাশ ধোয়ানো এবং জানাজা পড়ার ব্যবস্থা আছে।
লাশের সংখ্যা
এখানে কতটি লাশ দাফর করা হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে এই গণনায় দেখা যায় যে যায়, এখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫টি লাশ দাফন করা হয়। সপ্তাহে প্রায় ২০০-২৫০টি লাশ দাফন করা হচ্ছে। এখানে ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান আমলের বেশ কিছু কবর সংরক্ষিত আছে।
বিধি-বিধান
ঢাকা সিটি কর্পেরেশান এই গোরস্থানের ব্যবস্থানার দায়িত্বে নিয়োজিত।
0 মন্তব্য(গুলি):
for post your Comment plz select this option from the list
Comment as: Anonymous